কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা: কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন দালালরা নিয়ন্ত্রন করছে। দালালদের কথায় চলছে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো। চার কলোনির ১৪ ঘর বিক্রি ও ৩৫টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বরাদ্দ নিয়ে এসব ঘরে থাকছেনা লোকজন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবর্তে অন্যরা থাকছেন। আবার বরাদ্দ একজনের নামে, থাকেন অন্যজন। এ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘর নিয়ে চলছে বাণিজ্য।
একশ্রেণির দালাল এসব অনৈতিক কাজের মাধ্যমে কলোনির বাসিন্দাদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেন। এসব দালাল তাদের পছন্দের লোকজন এনে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে ঘরে থাকতে দেয়। প্রতি মাসে নতুন নতুন মুখের লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে কলোনিতে। উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন কলোনির বাসিন্দারা। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাদক কারবারীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা আশ্রয়ণ প্রকল্পকে নিরাপদ স্থান মনে করে।
জানা যায়, উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া কলোনি, মধ্যম চরকাদিরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ প্রকল্প, চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্প ও ফজুমিয়ারহাট বাজারের পূর্ব পাশে ভূলুয়া নদী সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে এসব অভিযোগ উঠেছে। এসব কলোনিতে ঘর পাওয়া অধিকাংশ ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে ঘরগুলো।
আবার স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন ঘর বরাদ্দ নিয়ে ব্যবহার করছে না। তাদের আত্মীয় স্বজনদের থেকে টাকা নিয়ে স্টাম্পের মাধ্যমে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। একই পরিবারের ৩/৪ জনের নামে একাধিক ঘর বরাদ্দ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা জানান, কমলনগর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাতদিন পরিশ্রম করে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো অত্যন্ত টেকসই করে নির্মাণ করেন। নির্মাণের পরে এসব ঘরগুলো বরাদ্দও দেয়া হয়।
বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একশ্রেণির দালালদের মাধ্যমে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে স্বাবলম্বীরাও ঘর বাগিয়ে নেন।
চরকাদিরা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া কলোনিতে প্রায় ১০টি ঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। ৮টি ঘর বিক্রি করেন বিভিন্ন নামে বরাদ্দ পাওয়া সুফলভোগীরা। নির্মাণের পর থেকে ঘরগুলোতে কেউ থাকেনা। তবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৭৪টি ঘরের মধ্যে ১৭টি ঘর তালাবদ্ধ। নির্মাণের পর থেকে এসব ঘর কেউ ব্যবহার করছেনা।
এর মধ্যে ২৬৬,১৮১,২৭৮,২৬৫,২৬৮ ঘরগুলো বিক্রি করা হয়েছে। ফজুমিয়ারহাট ভূলুয়া নদী সংলগ্ন স্বাধীনতা সংগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে ২৩০ নম্বর ঘরটি নাজিরগঞ্জ এলাকার কামাল ও ২৫০ নম্বর ঘরটি জান্নাতের নামে বরাদ্দ হয়। কিন্তু তাদের বাড়িঘর থাকায় এখানে মাঝে মধ্যে এসে দেখাশোনা করে চলে যান তারা। থাকেন না আশ্রয়ণে।
২৫৬ নম্বর ঘরটির কবুলিয়াত হয় আবুল বাসার ও লিপির নামে। তারা থাকেন চট্টগ্রামে। পরে ঘরটি রুমার কাছে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে বিক্রি করা ঘরে রুমাও থাকেননা। দীর্ঘদিন ধরে ঘরটি তালাবদ্ধ। নির্মাণের পর থেকে ৩৮০ নম্বর ঘরটি একেবারে খালি। কে বরাদ্দ পেয়েছেন তাও বলতে পারছেনা কলোনির বাসিন্দারা। এছাড়া ৩১২,২২৭,৩২১,২৪৮,২৩২,৩৩৩,৩৩৫ ও ৩৩৬ নম্বর ঘরগুলোও রয়েছে তালাবদ্ধ।
কলোনির বাসিন্দা শাহিনুর বলেন, বহু গরিব মানুষ এখনো ঘর পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন, কিন্তু ঘর পাচ্ছেনা। অথচ ধনীরা ঘর পেয়ে ঘরে থাকেনা। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।
আকাশজমিন/এসআর