সাজু আহমেদ।। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ভূবন তথা সঙ্গীতাঙ্গনে অনুক্ষণ যন্ত্রণায় বিদগ্ধ, মানবিক মানুষ, গীতিকবি, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী আশীষ দেবরায় তমাল। আট শতাধিক গানের গীতিকার হিসেবে সঙ্গীতাঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত নাম আশীষ দেবরায়। বাংলাদেশের অন্যতম কৃতি সন্তান বরেন্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব আশীষ দেবরায়। একাধারে তিনি গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত প্রযোজক এবং সঙ্গীতশিল্পী। তার রচিত অসংখ্য মৌলিক গান বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয়েছে। তবে গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীশিল্পী, প্রযোজক, সংগঠক সব কিছু ছাপিয়ে তিনি একজন মানবিক মানুষ। সমাজের একজন সচেতন মানবিক মানুষ হিসেবে দেশে বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন, পরিচিতি পেয়েছেন। ‘আকাশ ছুতে চাই’খ্যাত এই গীতিকারের লেখা এবং সুর করা অসংখ্যগান বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের কণ্ঠে গীত ও প্রশংসিত হয়েছে।
‘ভুল করে প্রেম আর প্রেম করে ভুল’ শিরোনামের গানটির মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু। পরপর ঐ দিনই ‘স্বপ্নের ডানা মেলে উড়ে যাই’ পুতুলের জন্য গান তৈরি করেন। ‘যদি ভুল এর নাম ভালোবাসা হয়’, ‘কখনো সুখকে নিজের মত করে পাওয়া যায় না’, ‘সাদা কাগজে ছোট্ট করে লিখে দিও ভালোবাসি’, ‘আকাশ ছুঁতে চাই মেঘের ভালোবাসা দিয়ে’, ‘আমি জনমও জনমও ধরে ভালোবেসে পাইনি তোমায়’ এরকম আরো বেশ কিছু গান মিডিয়াতে বিশেষ করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে গীত এবং প্রচার হয়েছে। আশীষ দেবরায়ের লেখা এবং সুরে হুমায়রা বশিরের কণ্ঠে ‘চিঠি’ নামের অ্যালবাম রিলিজ হয়েছে। এছাড়াও আশীষ দেবরায়ের লেখা ও সুর করা পরপর অনেকগুলো গান আসছে। বাংলাদেশের সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করতে নিয়মিতভাবে গান লেখার পাশাপাশি সুরও করছেন আশীষ দেবরায়।
দেশবরেণ্য গীতিকার, শ্রীমঙ্গলের কৃতি সন্তান আশীষ দেবরায় নিউইয়র্ক শহরের কুইন্সে বসবাস করলেও সব সময় দেশ এবং দেশের মানুষের কথা ভাবেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২নং ভূনবীর ইউনিয়নের বাদেআলিসা গ্রামে এক ধর্নাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন তৎকালীন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা স্বর্গীয় গঙ্গেশ দেবরায়। ২০১২ সালে অভিবাসী হয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। থাকেন নিউইয়র্ক শহরে। পিতার রাজনৈতিক পথ অনুসরণ না করে নতুন প্রজন্মের এই গীতিকার আশীষ দেবরায় সঙ্গীত সাধনার মুল অনুপ্রেরণা হলেন তার ফুফাতো ভাই বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী প্রয়াত সুবীর নন্দী।
স্কুল জীবন থেকেই গান গাওয়ার পাশাপাশি গান লেখতে শুরু করেন তিনি। আগেই বলা হয়েছে এ পর্যন্ত তার লেখা গানের সংখ্যা আট শতাধিক। এরই মধ্যে বেশ কিছু গান বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পীরা গেয়েছেন। তার লেখা গান গেয়েছেন ক্লোজআপ তারকা পুতুল, হুমায়রা বশির, দিনাত জাহান মুন্নী, মৌসুমি মীম, মরিয়ম মারিয়া, শিল্পী বিশ্বাস, সারাবান তহুরা দীপ্তি, সাব্বির জামানসহ আরো অনেকে। তার লেখা ও সুরারোপিত গান নিয়মিতভাবেই প্রচার হয় দীপ্ত টিভি, এটিএন বাংলা, যমুনা টেলিভিশন, চ্যানেল আই প্রভৃতি চ্যানেলে।
সুদুর প্রবাসে বসে বাংলা সংস্কৃতি বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। গান লেখার পাশাপাশি তিনি নিউইয়র্ক শহরে বাংলাদেশীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করে চলেছেন। যা তাকে একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রায় সকলের কাছে পরিচিতি এবং মর্যাদা এনে দিয়েছে। নিজের সৃষ্টি করা ভালো আধুনিক গানের পাশাপাশি নজরুল সঙ্গীত গাইতেও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আশীষ দেবরায় জানান, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য তিনি নতুন ও ভিন্ন কিছু উপহার দিতে চান। নিজের কিছু মৌলিক গান নিয়ে হাজির হতে চান, শ্রোতা-দর্শকদের মাঝে বেঁচে থাকতে চান গানের ভূবনে। ভালো মৌলিক গানের মাধ্যমে শ্রোতা দর্শকদের মাঝে বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। শুধু কি তাই? বিদেশে কাজের ব্যস্ততার মাঝেও দেশের মাটি ও মানুষের কথা ভাবেন তিনি। তাইতো দেশের মানুষের খোঁজ রাখেন নিয়মিতই। মানুষের বিপদে তিনি পাশে থাকার চেষ্টা করেন। অসহায় মানুষের জন্য বিদেশ থেকে পাঠান খাদ্য, বস্ত্র, কিংবা চিকিৎসা সহায়তা। এইতো সম্প্রতি তিনি তাঁর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘গঙ্গেশ দেবরায় স্মৃতি পরিষদ’ এর ব্যানারে সিলেটের শ্রীমঙ্গলের নিজ এলাকায় একটি স্কুলে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছেন। স্থানীয়ভাবে শুধু নয় এই উদ্যোগটি আশীষ দেবরায়কে মানবিকতার চরম উৎকর্ষতা হিসেবে তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রকৃত মানবিক মানুষের গুণাবলী এমনি হওয়া উচিৎ। বিদেশে বসেও দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভোলেননি আশীষ দেবরায়। এমন মানবিক উদ্যোগ তারই প্রমাণ। সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব আশীষ দেবরায় এভাবে নিজ কর্ম গুণে আজীবন মানুষের ভালোবাসায় ঋদ্ধ হবেন, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। মানবিক এই মানুষটির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
আকাশজমিন/এসএ