সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন

ছোটদের বকাবকি নয় গল্প করুন, বন্ধু হোন

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩ ৫:৩০ pm

আকাশজমিন প্রতিবেদক: শিশুরাই দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কর্ণধার। বাবা-মার কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাদের ঘিরেই তো সমস্ত পরিকল্পনা, সব স্বপ্ন। কিন্তু সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলা যে চাট্টিখানি কথা নয়!

এই ‘মানুষ’ করতে গিয়েই সমস্যার শুরু। শুরু বকাবকির, শুরু চড়-থাপ্পড়, খুন্তির খোঁচা, স্কেলের বাড়িÑ এমন হাজারো রকম শাস্তির। আমাদের সমাজে হাজারো কাজের চাপ, টাকা-পয়সার টানাটানি, আবার অনেক সময় নেহায়েত অভ্যাসের বশেও বাবা-মা ছেলে-মেয়ের ওপর এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। আমি, আপনি বা আমাদের চেনাশোনা অনেকের জীবনেই এমন ঘটনা ঘটেছে, ঘটে চলেছে এখনো।

প্রশ্ন হলো, এমন শাস্তি কি সত্যিই কাজে দেয়? বাচ্চাকে গায়ের জোরে কি সত্যিই কিছু শেখানো যায়? জোর করে খাওয়ানো, পড়তে বসানো, খেলতে বারণ করাÑ এসব আদতে কোনো কাজে আসে কিনা, সে কথা কখনও ভেবে দেখেছেন? আমার তো মনে হয়, এতে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, বাড়ে উভয়পক্ষের মানসিক যন্ত্রণা, দ্বন্দ্ব, এমনকি অনেক সময় বিপথগামীও হয়ে যায় ছেলে বা মেয়েটি। বাচ্চাদের যত্ন প্রয়োজন। তাদের আদর করে, নিয়ম করে হাঁটতে-দৌড়াতে-খেতে-পড়াশোনা করতে শেখাতে হয়। বন্ধুর মতো কাছে বসে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো তুলে ধরতে হয় সামনে। আসলে প্রকৃত শি¶া বলতে যা বোঝায় সেটা তো শুধু স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চারিত্রিক ও আর্থিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও যে এ শি¶ার সঙ্গে জড়িত! আর সেই শিক্ষা বোধহয় শুরু হয় জন্মের পরপরই।

দ¶িণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে প্রায়ই দেখা যায় বাচ্চার সঙ্গে, এমনকি শিশুর বয়স তিন-চার-পাঁচ-ছায়-সাত বছর পর্যন্তও, ‘ওলে বাবালে’, ‘আমার সোনটা মনা’ এসব আদুরে অর্থহীন ভাষায় কথা বলতে। এভাবে কথা বলা মানেই কি ভালোবাসা প্রকাশ? না, ক¶নো না। আমার তো মনে হয়, এতে শিশুরা ঠিকমতো কথা বলতে শেখে না, শেখে না নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে।

আবার দু-তিন বছরের বহু শিশুকেই দেখা যায় খেলনা, জিনিসপত্র নষ্ট করতে, যা খাচ্ছে তার অর্ধেক ফেলে দিতে, খাওয়ার বা অন্য কোনো কাজের সময় অহেতুক লাফালাফি করতে। আচ্ছা, এর জন্যও আমরা, মানে অভিভাবকরাই কি দায়ী নই? আমরা কি বলি নাÑ ‘ও তো বাচ্চা, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে’ অথবা ‘আমার ছেলে/মেয়েটি ভীষণ দুরন্ত, কী করি বলুন তো?’ আর তারপর বাচ্চা আরো একটু বড় হয়ে যখন ঐ একই কাজ করে, আমরা কি তখন তার পিঠে এক ঘা অথবা কান মলে দেই না?

নিজেকে একবার জিজ্ঞাসা করুন তো… । আপনি কি আপনার সন্তানকে নিয়ম করে একটি জায়গায় বসিয়ে খাইয়েছেন? হাতে মোবাইল ফোন, আইপ্যাড অথবা টেলিভিশন ছেড়ে নয়, বসিয়ে প্রতিদিন গল্পের বই পড়ে শুনিয়েছেন? আপনি নিজে কি সময়মতো খান? বই পড়েন? বা সব জিনিস গুছিয়ে রাখেন? ভুলেও আপনি কখনও তাদের সামনেই ঝগড়াঝাটি করেন না তো? দেন না তো গালাগাল?

বাচ্চারা কিন্তু ছ’মাস বয়স থেকেই শিখতে শুরু করে। তখন থেকেই তারা যেমন আদর বোঝে, বোঝে ধমকও। বয়স দুই পেরোতে না পেরোতেই বাচ্চাদের নিয়ম-শৃঙ্খলা, সৌন্দর্যবোধ, গুছিয়ে রাখা, নষ্ট না করা, কোনটা করা উচিত এবং উচিত নয়Ñ সেসব বোঝার ¶মতা আসে। এরপর ছয় বছরের মধ্যে তাদের মস্তিষ্ক পূর্ণতা পায়। এই বয়সের মধ্যে সে যা কিছু দেখে, শোনে এবং বোঝে, পরবর্তী জীবনে তার প্রতিফলন ঘটে। স্বার্থপরতা অথবা উদারতা, মায়া-মমতাÑ এগুলো কিন্তু সে আমাদের দেখেই শেখে, অথবা শেখে স্কুলের শি¶ক-শি¶িকার কাছ থেকে। ধরুন, আপনার বাচ্চাটা প্রতিদিন টিফিন ফেরত আনে। আপনি তখন তাকে যদি বলেন, ‘তুমি টিফিন খাও না কেন? তোমার বন্ধুরা খায় কেন? তুমি বোকা, না গাধা? আজ থেকে তোমার টিফিন বন্ধুরা যেন না খায়।’ এমনটা বলে তাকে কি আপনি আত্মকেন্দ্রিকতাই শেখালেন না? কেন বললেন না মিলেমিশে খাওয়ার কথা? আবার আপনার বাচ্চাটি খারাপ রেজাল্ট করার পর তাকে আপনি হয়ত বললেন, ‘তোমার খালাতো ভাই কত বুদ্ধিমান! খেলাধুলাতেও ভালো।’ অথবা ‘রানা কত ভালো রেজাল্ট করেছে দেখেছো? তুমি তো কিছুই পারো না।’ আচ্ছা, এতে আপনি আপনার সন্তানটিকে উৎসাহিত না নিরুৎসাহিত করলেন?

এখানেই শেষ নয়। ঘরে যদি ছেলে ও মেয়েও থাকে তাহলে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাবা-মা ছেলেটিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তার পাতে বড় মাছটা, দুধের গ্লাসটা তুলে দিচ্ছি। ছেলেটিকে খেলতে পাঠাচ্ছি অনায়াসে অথচ মেয়েটিকে, সে যদি ছেলেটির চেয়ে বয়সে ছোটও হয়, তাকে বলছি ঘরের কাজে হাত লাগাতে। কেন? এটা কি বৈষম্য নয়? এতে আপনার ছেলেটি কি কোনোদিন মেয়েদের সম্মান দিতে শিখবে? বড় হয়ে ওরাই কি মেয়েদের উত্ত্যক্ত করবে না, বলুন?

অথচ আমি, আপনারা, আমরা যদি ছোট থেকে ছেলে-মেয়েকে এক চোখে দেখতাম, যদি সান্নিধ্য, সাহচর্য দিয়ে, তাদের সঙ্গে প্রাণখুলে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতাম, গল্প করতাম, বয়ঃসন্ধিতে বন্ধু হতামÑ তাহলে হয়ত তাদের প্রতি আমাদের কঠোর হতে হতো না।

 

 

আকাশজমিন/এসআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD