আকাশজমিন প্রতিবেদক।। বাংলাদেশে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী বিষয়ক ও চিত্রকলার অন্যতম বড় আয়োজন ঢাকা আর্ট সামিট(ডিএএস)-এর পর্দা উঠছে আগামী শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি)। এবারের ষষ্ঠ সংস্করণে প্রথমবারের মতো বাংলা প্রতিপাদ্য- ‘বন্যা’ ঠিক করা হয়েছে। আয়োজনে অংশ নেবেন দেশি-বিদেশি ১৬০ এর বেশি শিল্পী। আগামী ৩ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এ বছরের আসরে জলবায়ু পরিবর্তন, লৈঙ্গিক সম্পর্ক, বিভিন্ন প্রজন্মের আলোচনা গুরুত্ব পাবে।
গতকাল ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ বছরের আর্ট সামিট উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় গণমাধ্যমের কাছে আর্ট সামিটের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সামদানি এবং ট্রাস্টি রাজিব সামদানি। ঢাকা আর্ট সামিটের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে। প্রদর্শনীকে ঘিরে ইতোমধ্যেই নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে পুরো আঙিনা। ৯ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক ও শিল্প সংগ্রাহকদের অংশগ্রহণে থাকছে, ওয়ার্কশপ, পারফরম্যান্স সেমিনার সহ বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী।
ঢাকা আর্ট সামিট-২০২৩ আবর্তিত হয়েছে প্রতিপাদ্য- ‘বন্যা’কে ঘিরে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ‘বন্যা’ শব্দরূপটি কেবলমাত্র একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় বরং এর চেয়ে বেশি কিছু এবং এ দেশে মেয়েশিশুদের নাম হিসেবেও ‘বন্যা’ পরিচিত। এবারে ঢাকা আর্ট সামিটে ‘বন্যা’কে উপস্থাপন করা হয় ভিন্নরূপে; যে প্রশ্ন তোলে গতানুগতিক বাইনারি চিন্তাধারার বিরুদ্ধে- আবশ্যকতা ও অনাবশ্যকতা, পুনর্র্নিমাণ ও দুর্যোগ, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক, নারী ও পুরুষ বিষয়ক প্রথাগত ধারণা নিয়ে। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের প্রদর্শনীতে এই সম্পর্কের বিশদ তাৎপর্য উঠে আসবে। এছাড়া, সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন ১২ জন বাংলাদেশি শিল্পী, যাদের শিল্পকর্মে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ইস্যু প্রাধান্য পাবে।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঢাকা আর্ট সামিটের ষষ্ঠ সংস্করণ উদ্বোধন করতে সম্মতি জানিয়েছেন। এছাড়া, উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, ঢাকা আর্ট সামিটের ডিরেক্টর ও সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সামদানী এমবিই, ঢাকা আর্ট সামিট ও সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি রাজীব সামদানী, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মোহাম্মাদ সাকের শামীমসহ অন্যারা।
আর্ট সামিটের ষষ্ঠ আসরে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন- সুমাইয়া ভালি, এন্টনি গ্রমলি, আসফিকা রহমান, বিনোদবিহারী মুখার্জি, ভাষা চক্রবর্তী, চিত্রপ্রসাদ, ড্যানিয়েল বয়েড, দামাসুস হাচা, ফয়সাল জামান, গণেশ পইনি, গাজালেহ আভারজামানি, হা বিক চুহেন, হাবিবা নওরোজ, জামাল আহমেদ, জয়দেব রোয়াজা, জানি রুসিকা, কবির আহমেদ মাসুম চিশতি, কামরুজ্জামান স্বাধীন, লালা রুখ, লাপডিয়াং সাইয়েম, ম্যারিনা পেরেজ সিমাও, নাবিল আহমেদ, নাজমুন নাহার কেয়া, পল তাবুরেত, রূপালি গুপ্তা ও প্রসাদ শেট্টি, প‚র্ণিমা আক্তার, রফিকুন নবী, সাফিউদ্দিন আহমেদ, সাহেজ রাহাল, তানিয়া গোয়েল, ভেরুনিকা হাপচেনকো, ইয়াসমিন জাহান নুপ‚র, রিজভি হাসান, গনেশ পাইন ও অন্যান্যরা।
প্রসঙ্গত, ঢাকা আর্ট সামিটের যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। এরপর এ পর্যন্ত পাঁচবার সফলভাবে এই প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রতি দুই বছরে আর্ট সামিটের আয়োজন করে থাকে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন। এই আর্ট ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পকলার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন ও দেশের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা।
দেশের সম-সাময়িক আর্টিস্ট এবং আর্কিটেক্টের কাজের সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১১ সালে কালেক্টর নাদিয়া ও রাজিব সামদানী প্রতিষ্ঠা করেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন (এসএএফ), যা বাংলাদেশভিত্তিক একটি প্রাইভেট আর্টস ট্রাস্ট। আর্টিস্ট ডিরেক্টর এবং কিউরেটর, ডায়ানা ক্যাম্পবেল বেটানকোর্টের নেতৃত্বে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য বাংলাদেশের সম-সাময়িক শিল্পকলার সাথে দর্শকদের গভীর সংযোগ স্থাপন এবং দেশের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশি শিল্পীদের সৃজনশীলতাকে এক অন্য পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে গ্রান্ট, রেসিডেন্সি, শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। এটিকে সফল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে পার্টনারশিপ এ বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাথে সম্পৃক্ততায় কাজ করে যাচ্ছে।
আকাশজমিন/এসএ