সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

নাজনীন নাহারের ভাবনায় ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১০:২৬ am

বইমেলা মানেই হলো বই, লেখক, প্রকাশনা এবং সর্বপোরি পাঠকদের মিলনমেলা। বইমেলা মানে লেখক পাঠকদের সমাবেশ, মতবিনিময় এবং বইয়ের ক্রয় বিক্রয়। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ও বইয়ের আলোচনা সমালোচনায় মুখরিত চারিদিক। দলবেঁধে বন্ধুরা, শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সকলে মিলে বইমেলায় গিয়ে নিজেদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী বই কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বইয়ের নাম দেখে, লেখকের নাম দেখে ভালো লাগা থেকে স্টলের সামনে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে থেকে বই নেড়েচেড়ে দেখে এবং দুই পাতা পড়ে বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন জনরার বই কিনে বাড়ি ফেরার গল্প।

আমাদের বাঙালি সংষ্কৃতিতে বইমেলা হলো প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে লেখক, প্রকাশক এবং বইপ্রেমীদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ। আগে লেখকদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। আর এখন হাজার হাজার লেখক। এটা আমার দৃষ্টিতে অবশ্যই সভ্যতার উন্নয়নে সুবার্তা।

তবে অতিরিক্ত লেখক ও কবিদের নিয়ে আবার নানা রকম নেতিবাচক আলোচনা এবং সমালোচনা প্রচলিত রয়েছে এখন বেশ জোরালো ভাবে। আরও রয়েছে অনলাইন ভিত্তিক লেখক গোষ্ঠীকে মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবার একটা প্রবণতা। আমার বিশ্বাস এটা সময়ের বিবর্তনে একসময় কেটে যাবে। কারণ আজ যা নতুন বলে মূলধারায় অন্তর্ভূক্ত করতে অধিকাংশের আপত্তি। একদিন এই নতুনই পরিচিত হবে মূলধারার সংষ্কৃতি বলে। অতীত থেকে বর্তমান এভাবেই তৈরি হয়েছে এবং সমৃদ্ধ হয়েছে সাহিত্য, সংষ্কৃতি এবং সভ্যতার মূলধারা।

২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আলোচনায় আমি গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে একটু ভিন্ন ধারায় আলোচনা করতে চাই। আসলে গতানুগতিক ধারার আলোচনা সমালোচনাটা মূলত সকলেই করে থাকবে। যেমন ধরুনঃ

(এক) কাগজ ও মূদ্রণ শিল্পের জিনিসপত্রের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি এবং এর প্রভাব।
(দুই) মানুষের মধ্যে পূর্বের চেয়ে বই পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়া।
(তিন) ক্রমাগত বই কেনার প্রবণতা হ্রাস পাওয়া।
(চার) লেখা ও প্রকাশনার মান মানসম্মত না হওয়ার অভিযোগ।
(পাঁচ) কিছু কিছু প্রকাশনার একক আধিপত্য এবং প্রভাব।
(ছয়) নতুন লেখকদের লেখা বইয়ের প্রতি পাঠকদের অনাগ্রহ।

এই বিষয়গুলো প্রায় প্রতিবছরের বইমেলার বহুল আলোচিত বিষয়। তাই এই সকল গতানুগতিক বিষয়ের আলোচনায় আমি না গিয়ে বইমেলা নিয়ে নতুন ধরনের একটা আলোচনায় যাব। তা হলো-

লেখক, কবি এবং নতুন লেখকদের লেখা বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বিষয়ে। এবং তার সাথে অনলাইন সাহিত্য চর্চা, অনলাইন সাহিত্যিক, অনলাইন কবি-লেখক এবং অনলাইন ভিত্তিক লেখকদের বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিও চরমভাবে নেতিবাচকতার শিকার হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন এবং নেতিবাচক সমালোচনা করছেন এই লেখক, কবির সংখ্যা এবং এদের বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে। এই সমালোচনা যে শুধু প্রতিষ্ঠিত এবং পুরাতন লেখক, প্রকাশক এবং সুধী সমাজই করছেন তা নয়। এই নেতিবাচক সমালোচনা নতুন লেখক প্রকাশকরাও কেউ কেউ করছেন তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সংকীর্ণ মানসিকতার জায়গা থেকে। যদিও আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর কোনো সৃজনই সমালোচনা ছাড়া প্রতিষ্ঠিা পায়নি। তাই এই বিষয়টিও সময় এবং পরিস্থিতি সমাধান করে দিবে।

আমি অবশ্য এই বিপুল সংখ্যক কবি-লেখক বৃদ্ধি হওয়া। সংখ্যার দিক থেকে বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে বাংলা সাহিত্য ও সংষ্কৃতির জন্য সম্পুর্ণ ইতিবাচক হিসেবে দেখি। যেমন ধরুন আমরা যারা লিখি, তারা আমাদের লেখার মাধ্যমে সকল মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, মানুষে মানুষে একাত্মতা প্রতিষ্ঠা করা, সকল মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ জাগ্রত করা, প্রতিটি মানুষকে মানবিক হওয়ার শিক্ষা দেওয়া, সকলের মধ্যে দেশপ্রেম, সততা, নৈতিকতা, ক্ষমা এই সকল গুণগুলোর দীক্ষা এবং বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করি। তার মানে হলো আমরা যত বেশি মানুষ সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হব, যত বেশি সাহিত্য চর্চা করব, যত বেশি সংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিচরণ করব তত বেশি এইসকল মানবিক গুণে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করব। মূলত আমরা সকলে প্রকৃত অর্থে মানুষ হব।

তার মানে যত লেখক ও কবির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ততই মানবিক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এক একজন কবি লেখক একটা একটা পরিবারকে মানবিক গুণসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এভাবে সমাজ ও সমাজ থেকে রাষ্ট্র, জনগণ এবং সর্বপরি সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে মানবিকতার বিশুদ্ধ বোধের অখণ্ড সন্তরণ সৃষ্টি হবে।
আমাদের সমাজ ও সভ্যতা থেকে হিংসা, পরনিন্দা, পরচর্চা, অমানবিকতা বিলীন হবে।

আমরা প্রায় সকলেই জানি, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত এবং মানবিক গুণসম্পন্ন। সেই জাতি মানুষ হিসেবে এবং জাতি হিসেবে তত বেশি সমৃদ্ধ। তাই হোক অনলাইন বা অফলাইনে সাহিত্য চর্চা। চর্চা হোক এবং কবি লেখকরা প্রথমে নিজেকে সংশোধন করে করে প্রকৃত মানবিক মূল্যবোধের অনন্য মানুষে পরিণত করুক, এভাবেই সকল কবি, লেখক এবং সংষ্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের মানবিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে মনুষ্যত্বের উদাহরণ হিসেবে তৈরি করে ব্যক্তি, পরিবার , সমাজ, রাষ্ট্র, জাতি, সভ্যতা সংস্কৃতি এবং পৃথিবীকে মানবিক পৃথিবীতে রূপান্তর করবে। এভাবেই মানুষ আরও মানবিক হবে।

মানুষ হবে প্রকৃত অর্থে মানুষ। বিশুদ্ধ বোধের অখণ্ড সন্তরণে বাঁচবে সকলে। সকলে পরস্পরের সহযোগী ও সহযাত্রী হব। সকলে মিলেমিশে পৃথিবীময় একটা পরিপূর্ণ সুসভ্য মানবিক মানুষ জাতি গড়ে তুলব। আমাদের সকল কবি, লেখক, প্রকাশক এবং সংষ্কৃতিক ব্যক্তিদের এটাই হওয়া উচিত সত্যিকারের ব্রত। বই, কবি, লেখক, প্রকাশক এবং সর্বপোরি এবারের ও আগামীর বইমেলা নিয়ে এটাই আমার একান্ত ভাবনা।

আকাশজমিন/এসএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD