আকাশজমিন প্রতিবেদক: প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) দেড় শ’ আসনের ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ইভিএমে ভোটগ্রহণের পক্ষে-বিপক্ষে প্রায় এক বছর অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ইভিএমে ভোট নেয়ার বিপক্ষে ছিল।
নাগরিক সমাজের অনেকেও এই যন্ত্রের বিপক্ষেই বলেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, টাকা না থাকায় ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এখন সংস্থাটির হাতে থাকা ইভিএম নিয়েই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে নির্বাচন কমিশনের হাতে যে কয়টি ইভিএম আছে তাতে ৫০ থেকে ৭০ আসনে ভোট নেয়া যাবে; অর্থাৎ এখন এটা প্রায় নিশ্চিত যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মূলত ব্যালটেই হবে।
ইভিএমে ভোট নেয়া নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, তার অবসান হলেও নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে যে সমস্যা, তার কিন্তু অবসান হলো না। ইভিএমে ভোট না হওয়ার খবরের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাৎ¶ণিকভাবেই বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইসির সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাব না।’
ব্যালটে ভোট হলেও বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকলে কীভাবে দলটিকে ভোটের মাঠে আনা হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
রাজনৈতিক আপত্তির কারণে যে ইভিএম বাতিল হয়েছে, তা নয়। আর্থিক সংকটের কারণে ইভিএম থেকে পিছু হটতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম আরও বলেছেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে ¶মতাসীন দল আওয়ামী লীগপন্থিরা ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের মতে, এটি কারচুপির যন্ত্র। এ ছাড়া বিশিষ্টজনেরাও ইভিএমে ভোটগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইভিএম কেনা ও এর পেছনে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
নতুন এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পূরণ হলো উল্লেখ করে জাহাংগীর আলম বলেছেন, বিশিষ্ট নাগরিকদের যে আশা ছিল, সেটাও বাস্তবায়িত হলো। দল-মতনির্বিশেষে বর্তমান সিদ্ধান্ত পছন্দ করবে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সহযোগিতা করবে।
নির্বাচন কমিশনের এই আশার সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান সাংঘর্ষিক। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা কি নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব? সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসির ওপর চাপ আছে। বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের, যা কমিশন এককভাবে নিতে পারবে না।
আকাশজমিন/এসআর