সাজু আহমেদ।। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূর। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সু অভিনয় করে বেশ আগেই খ্যাতি অর্জন করছেন তিনি। পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক বিভিন্ন কর্মাকন্ডে সম্পৃক্ত থাকতেও দেখা যায় তাকে। অভিনয়, সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি কিছুদিন আগে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ এবং যাতায়াত করার কথাও শোনা গিয়েছিল। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন ওইদলের হয়ে এমপি ইলেকশনের জন্য মনোনয়ের পাওয়ার চেষ্টা তদবিরে ব্যস্ত এই নায়িকা ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মননেয়ান পাননি। তাতে কি তিনি তার স্বভাবসুলভ সামাজিক তথা মানবিক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। কিছুদিন আগে ‘ঢাকা ৮৬’খ্যাত চিত্রনায়িকা অসুস্থ রঞ্জিতার পাশেও দেখা গেছে তাঁকে।
সেই ধারাবাহিকতায় সমাজের বিশেষ শ্রেনীর শিশু, বিশেষ করে অটিজম আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় করেছিলেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগের এক জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুক পোষ্টে শাহনূর বলেছিলেন ‘জন্মদিনে অনেক বড় বড় পার্টি করতাম। এবারে পার্টি করব না কিন্তু পার্টিতে যে টাকা খরচ করতাম, সেটা মসজিদ নির্মাণের কাজে লাগাব। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’ এমন ঘোষণা দিয়ে নিজের মানবিক গুণাবলীর কথাই জানান দিয়েছিলেন শাহনূর। এবারও তার ভক্তদের জন্য সু সংবাদ দিলেন মেধাবী এই অভিনেত্রী। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনেই মানবিক এই কর্মকান্ড শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছেন শাহনূর। সেখানে তিনি লিখেছেন-
‘বাবা-মায়ের কোলজুড়ে একটা শিশু জন্ম নেয়।পরিবারে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। শিশুটিকে ঘিরে মা বাবা বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল।তারপর শিশুটি বড় হতে থাকে।বড় হওয়ার এক পর্যায়ে দৃশ্যমান হয় শিশুটি অন্য সবার মত নয়,শিশুটির অটিজম। মা বাবার স্বপ্নে আঘাত নেমে আসে।কিন্তু তাঁরা হার মানে না। অন্যরকম শিশুটিকে ঘিরে শুরু হয় মা বাবার যুদ্ধ।অটিস্টিক শিশুদের সবার জীবনের গল্প প্রায় একই রকম।ওরা অন্য সবার মত নয়। তার মানে তাঁরা সমাজের বোঝা নয়। করুণা কিংবা সহানুভূতি দিয়ে নয়, অটিজম আক্রান্তদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকায় রাখুন। অটিস্টিক কোন গালি নয়। অটিজম আক্রান্তদের জীবন যুদ্ধকে সম্মান জানান।ভিগোর পণ্য বিক্রয় থেকে আয়ের একটা অংশ ব্যয় করা হবে অটিজম শিশুদের কল্যাণে।আপনিও এগিয়ে আসুন,বাড়িয়ে দিন হাত। শাহনূর আরও বলেন- ১০ ফেব্রুয়ারি আমার জন্মদিন।এইবার অটিজমদের সাথে জন্মদিন পালন করবো ইনশাআল্লাহ ’। ঘোষণা অনুযায়ি চিত্রনায়িকা শাহনুর তাঁর কথা রাখবেন এবং আরও বেশি বেশি মানবিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজের অসহায় পাশের পাশে থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা তার ভক্ত এবং শুভাকাকাঙ্খিদের।
প্রসঙ্গত যশোরের ক্যান্টমেন্টে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে শাহনুরের জন্ম। ১৯৯৫ সালে টেলিভিশন ম্যাগাজিন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দর্শকদের নজরে আসেন শাহনূর। ১৯৯৯ সালে ‘ফাঁসির আদেশ’ নামে একটি চলচ্চিত্রে তিনি প্রথমবারের মত অভিনয় করেন। তবে নানা কারণে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। এরপর ২০০০ সালে জিল্লুর রহমানের ‘জিদ্দি সন্তান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় এই নায়িকার। এই চলচ্চিত্রে তিনি চিত্রনায়ক রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করে পরিচিতি পান।
এরপর অবশ্য আর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজের অভিনয়শিল্পী প্রতিভার জানান দিয়েছেন তিনি। নিয়মিত অভিনয়ের ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালে তিনি ‘সাহসী মানুষ চাই’ ও ২০০৫ সালে ‘কারাগার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ‘সাহসী মানুষ চাই’ দুইটি বিভাগে ও ‘কারাগার’ একটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৫ সালে তিনি কোহিনূর আক্তার সুচন্দার পরিচালনায় সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল। ২০১৯ সালে মুক্তি পায় শাহনূর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ইন্দুবালা’। এর মাঝে ২০২১ সালে সোলায়মান আলী লেবুর পরিচালনায় ‘প্রেম পিরিতির বন্ধন’ চলচ্চিত্রে মিশা সওদাগর, অপু বিশ্বাস এবং জয় চৌধুরীর সঙ্গে অভিনয় করেন। এ বছরই বরেণ্য নির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের পরিচালনায় বৈশাখী টেলিভিশনের দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘জমিদার বাড়ি’ নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন তিনি। এছাড়া সর্বশেষ ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রফিক শিকদারের ‘বসন্ত বিকেল’ চলচ্চিত্রে তাঁর চরিত্রটিও বেশ প্রশংসিত হয়। এছাড়া ছাড়াও শাহনূর জাহিদ হোসেনের ‘জীবন যন্ত্রনা’, জাভেদ মিন্টুর ‘একজন বীরাঙ্গনা’, সরকারি অনুদানে নির্মিত ফারুক হোসেনের ‘কাকতারুয়া’, জুয়েল ফরাজির ‘হবে তো হবেই প্রেম’, সরোয়ার হোসেন লেবুর ‘এলো শহরে’, বাবু রায়ের ‘অপহরণ’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন
আজ শাহনূরের জন্মদিনে অনেক অনেক শুভকামনা। শুভ জন্মদিন শাহনুর।
আকাশজমিন/এসএ