আকাশজমিন প্রতিবেদক ।। হিন্দি সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গে ফের দুইভাগ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষরা। বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্প অঙ্গনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং মত পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিষদ নামের ১৯ সংগঠন এ বিষয়ে একাট্টা হতে দেখা গেলেও আদতে পুরো চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এ বিষয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুখ খুলছেন কেউ কেউ। তবে জোড়ালোভাবে প্রতিবাদও ঠিক সেভাবে আসেনি। চলচ্চিত্রটি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর বেশিরভাগই ঘুরিয়ে পেচিয়ে আদতে চলচ্চিত্র আমদানির পক্ষেই কথা বলেছেন। কতিপয় হলমালিক এবং চলচ্চিত্র পরিবেশক সময়ের আলোচিত বলিউডের সিনেমা ‘পাঠান’ আমদানির পক্ষে জোড়ালো উদ্যোগ নিলে এর পক্ষ বিপক্ষ স্পষ্ট হয়। তথ্য মন্ত্রনালয়ের কাছে ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে চলচ্চিত্র পরিষদ। এ কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি বাংলাদেশের মুক্তির পিছিয়ে যায়। তবে নানা জল্পনা কল্পনা সত্বেও আগামী ৩ মার্চ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে মুক্তি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন এদিনই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে মুক্তি দেয়ার জোড় চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বড়ই পরিতাপের বিষয় আগামী ৩ মার্চ মুক্তি পেতে যাচ্ছে খিজির হায়াত খানের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আরেক নতুন চলচ্চিত্র ‘ওরা ৭জন’। এমন একটি দিনে যদি ‘পাঠান’ মুক্তি পায় বা দেশে চালানো হয় তাহলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য তা হবে খুবই নেতিবাচক বিষয়।
এই যখন অবস্থা তখন একমাত্র ডিপজলের উচ্চকিত কণ্ঠ অনেকেরই নজর কেড়েছে। তিনি বলেছেন এদেশে হিন্দি সিনেমা আমদানি করা হলে তিনি প্রয়োজনে কাফনের কাপড় পরে রাজপথে আন্দোলন করবেন। শুধু এবারই নয় হিন্দি সিনেমা আমদানি ইস্যুতে এর আগে গত ২০১৫ সালেও ঢালিউডে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। সেবার কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমে মিছিল করেছিলেন নায়ক-নায়িকা ও বিএফডিসি সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি শাহরুখ খানের নতুন সিনেমা ‘পাঠান’ আমদানির সূত্রেই জোরালো হয়েছে ইস্যুটি। এমনিতেই ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বিভাজন ইস্যুর অভাব নেই। সংগঠন ভিত্তিক বিভাজন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, নানা প্রসঙ্গেই বিভক্ত হয়ে থাকেন তারা। এর মধ্যে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে হিন্দি সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গ। খুব স্বাভাবিকভাবে এই ইস্যুতেও দুটি পক্ষ দৃশ্যমান। একপক্ষ চাইছেন আমদানি করতে, আরেক পক্ষের কড়া বিরোধিতা। হিন্দি সিনেমা আমদানির বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে’কজন কথা বলেছেন, তাদের অন্যতম মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি একাধিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। এমনকি তার বিরোধিতার সংবাদ পৌঁছে গেছে বলিউড অব্দি! সেখানকার গণমাধ্যমেও তার নাম উঠে এসেছে। এদিকে গতকাল শনিবার আবারও হিন্দি সিনেমা আমদানির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা প্রযোজক পরিচালক ডিপজল। পুনরায় কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এদিন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পিকনিকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন একসময়ের সফল এই খলনায়ক। গত ২০১৫ সালের কাফনের কাপড় পড়ে আন্দোলন করলেও চলতি সময়ে শিল্পী সমিতি বিষয়টির পক্ষেই মত দিয়েছেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ বলেছেন, হিন্দি সিনেমা আমদানি করলে সেটার লাভের ১০ শতাংশ তার সমিতিকে দিতে হবে।
তবে ডিপজলের ভাষ্য, ‘ভাষার মাসে কেন হিন্দি সিনেমা আসবে? আমাদের নিজেদেরই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। গত ঈদের সিনেমা দিয়ে তো প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরেছিল। দর্শকদের জন্য ভালো গল্প উপহার দিতে হবে, তাহলেই তারা হলমুখি হবেন। হিন্দি সিনেমা কোনও সমাধান নয়। ভাষার মাসে হিন্দি সিনেমা আসার প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজনে আবারও কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নামবো।’ এই প্রসঙ্গে ডিপজল বলেন, ‘হিন্দি সিনেমার কাছে শিল্পী সমিতির কমিশন দাবি বেআইনি। এটা মুনাফিকের কাজ পারলে কিছু করে দেখাক। তারা কেন হিন্দি সিনেমার কাছে লভাংশ দাবি করবে? তারা যদি শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করতে চায় অন্যভাবে করুক। কমিশন নিয়ে কেন করবে?’সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এ অভিনেতা-প্রযোজক বলেছেন, ‘আগে যখন চলচ্চিত্রে অস্থিরতা ছিল, তখন তো আমরাই উত্তরণ করেছিলাম। সেভাবেই করতে হবে। হিন্দি সিনেমা সমাধান নয়। এ ধরনের চিন্তা না আনাই মঙ্গল। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সিনেমা নতুন করে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। বাঙালি হিন্দি নয়, বাংলা সিনেমা দেখতে চায়।’ এদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে সম্প্রতি একমত হয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৯টি সংগঠন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে, হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে এ ১৯ সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিও। লিখিত সম্মতিও জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে এ সংগঠনেরই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ডিপজল বলছেন ভিন্ন কথা। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের সিনেমা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, এর মধ্যে হিন্দি সিনেমা এলে বাংলা সিনেমা মুখ থুবড়ে পড়বে।
এদিকে সম্প্রতি হিন্দি সিনেমা আমদানির বিষয়টি নিয়ে অনেকটা তোলপাড় চললেও ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে এ বিষয়ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকেও কিছু বলেননি তিনি। এতে সংশ্লিষ্টরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এমন ইস্যুতে শাকিব খানের মতো শীর্ষ অভিনেতার নিরবতা মানতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে হিন্দি সিনেমার আমদানির বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও ভক্তদের জন্য জোড়া স্বীকৃতির খবর জানিয়েছেন এই চিত্রনায়ক। গত বৃহস্পতিবার শাকিব খান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটা ভিডিও প্রকাশ করে ভক্তদের এই প্রাপ্তির খবর জানান। ইউটিউব থেকে একটি গোল্ডেন প্লে এবং একটি সিলভার প্লে বাটন পেয়েছেন তিনি। শাকিব খান ইউটিউব চ্যানেলে এক লাখ সাবস্ক্রাইবারের জন্য সিলভার প্লে বাটনের স্বীকৃতি পেয়েছেন। এই চ্যানেলে শাকিব খান তাঁর নিজের সিনেমার খবর, শুটিংয়ের মজার মজার বিহাইন্ড দ্য সিন প্রকাশ করতেন। শাকিব খান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটা ভিডিও প্রকাশ করে ভক্তদের এই প্রাপ্তির খবর জানান। অন্যদিকে শাকিবের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মসের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ১০ লাখ পেরিয়েছে। ১০ লাখ বা ১ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হলেও গোল্ডেন প্ল্লে বাটন দেয় ইউটিউব। ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ইউটিউব চ্যানেল এসকে ফিল্মস। নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা শাকিব খানের এ ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের প্রযোজিত সিনেমার ট্রেলার, গান ও বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ।
আকাশজমিন/এসএ