পাবনা সংবাদদাতা: চিকিৎসা নিতে আসা শিশুর ক্যানোলা খুলতে গিয়ে ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের অগ্রভাগ (নখের অংশটুকু) কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক আয়ার বিরুদ্ধে৷
গত বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) দুপুরে আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিশুর নাম মিষ্টি পাল। তার বাবার নাম চন্দন পাল। তাদের বাড়ি জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে।
অভিযুক্ত আয়ার নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকায়। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
শিশুটির দাদা কার্তিক পাল জানান, ঠান্ডাজনিত কারণে তার চব্বিশদিন বয়সী তার নাতনী নবজাতক মিষ্টি পালকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) সকালে শিশুটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সেদিন দুপুরে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলে জানায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলার মাঝে নার্সের বদলে শিশুটির হাতে লাগানো ক্যানোলা খুলতে যান আঞ্জুয়ারা খাতুন নামের একজন আয়া। হাতের ক্যানোলার সাথে থাকা সার্জিক্যাল টেপ কেচি দিয়ে কাটতে গিয়ে শিশুটির ডান হাতের কনিষ্ঠা আগুলের অগ্রভাগ (নখের অংশটুকু) কেটে ফেলেন আয়া। শিশুটির চিৎকারে ছুটে আসে অন্যান্য রোগীরা। তখন সুযোগ বুঝে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান অভিযুক্ত ওই আয়া। পরে তাকে শিশু ওয়ার্ড থেকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয় শিশুটিকে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি।
শিশুটির মা শিল্পী পাল বলেন, ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের মাথার অংশ কেটে পড়ে গেছে। চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়েছেন। আমার মেয়ে ভাল আছে। মেয়ে সুস্থ্য হলেই আমরা খুশি। আমাদের কোনো অভিযোগ বা চাওয়া-পাওয়া নাই।
শুক্রবার রাতে হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে কর্তব্যরত জৈষ্ঠ স্টাফ নার্স নাজিরা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার পর শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ড থেকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে শিশুটির অবস্থা ভাল আছে। ভয়ের কারণ নেই। দু’একদিনের মধ্যেই ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে।
নাজিরা খাতুন বলেন, কোন আয়া এ কাজ করছেন আমরা জানি না। আমাদের ধারণা, হাতের সার্জিক্যাল টেপ সার্জিক্যাল কেচি দিয়ে কাটতে গিয়ে কেচির নিচে আঙুল থাকায় অসাবধানতাবশত এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কনিষ্ঠা আঙুলের মাথার অগ্রভাগ অর্থাৎ নখের অংশটুকু কাটা পড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আপনাদের মতো আমিও শুনেছি। বিস্তারিত জানি না। আজ বাইরে আছি। শনিবার অফিসে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেবো কিভাবে, কার অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটলো। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার পর অভিযুক্ত আয়া আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, আমি কেচি দিয়ে ক্যানোলা লাগানো টেপ কাটতে গিয়ে হাতের আঙুল সবগুলোই মনে হলো ধরেছিলাম। কিন্তু এর মাঝে যে কনুই আঙুল কেচির মধ্যে ছিল সেটা টের পাই না। এতদিন ধরে কাজ করি কোনোদিন ভুল হয়নি। এটা আমার ভুলবশত হয়েছে। তিনি পাঁচ বছর ধরে আয়ার কাজ করেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় হাতের তিনটি আঙুল হারায় ১৩ মাস বয়সী শিশু তাছিম।
আকাশজমিন/এসআর