আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা: বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেই সহ-সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ভুয়া নিয়োগে তিনি এমপিওভুক্ত হয়ে গত তিন বছর ৭ মাসে সরকারী ১০ লক্ষ ২২ হাজার ৫১২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে বুধবার মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
মাওলানা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু গত তিন বছর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি এর কোন প্রতিকার পায়নি।
জানাগেছে, ২০০০ সালে উপজেলার কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের গেন্ডামারা গ্রামে ইউসুফ আকন কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার নামে ১০০ শতাংশ জমি দান করেন। ওই জমিতে মোফাজ্জেল হোসেন ইউনুস মাষ্টার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার করেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস মাষ্টার সহ-সুপার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন।
ওই বছর ২১ ডিসেম্বর আমতলী ইউএনও অফিসে ইউএনও মোঃ মঞ্জুরুল হক ভুইয়াকে সভাপতি করে ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে নিয়োগ বোর্ড গঠন শেষে পরীক্ষা হয়। এতে মনিরুল ইমলাম, মোঃ আবুল কালাম ও ইব্রাহিম খলিল নামের তিনজনে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৫০ নম্বরে মধ্যে ২৮ নম্বর পেয়ে আবুল কালাম নির্বাচিত হন। আবুল কালাম ওই মাদ্রাসায় যোগদান করে দুই বছর চাকুরী করেন কিন্তু মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০০৬ সালে তিনি সৌদি আরবে চলে যান ।
এ সুযোগে গোপনে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন নিয়োগ বোর্ডের সকলের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করেছেন। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাওলানা মোঃ আলা-উদ্দিন তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মোঃ মানজুরুল হককে দেখান। কিন্তু মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মানজুরুল হক ওই পরীক্ষায় অংশ নেয়াতো দুরের কথা আবেদনই করেননি বলে তারা দাবী করেন।
ওই দুই জনকে ভুয়া প্রার্থী দেখিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে আলাউদ্দিন সহ-সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন। তৎকালিন ইউএনও মোঃ মঞ্জুরুল হক ভুইয়াসহ যাদের নিয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাদের সকলেই স্বাক্ষরই জাল করা হয়। এছাড়া সুপার হিসেবে মাওলানা আবদুল কুদ্দুস নামে ওই নিয়োগ বোর্ডে যার স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে ওই নামে কোন সুপার মাদ্রাসায় কোন দিনই ছিল না। এমনকি ওই নিয়োগ বোর্ড সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা কেই অবগত নন। ওই ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সিটে নিয়োগ কমিটির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস মাষ্টার ও জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্রে জানাগেছে, ২০০৪ সালে ২১ ডিসেম্বর কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় তিনজনে অংশ নিয়ে মোঃ আবুল কালাম নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর সহ-সুপার পদে আর কোন নিয়োগ পরীক্ষার তথ্য ওই অফিসে সংরক্ষিত নেই। ২০১৯ সালের পয়েলা জুলাই ওই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়। ওই সময়ে সহ-সুপার পদে মাওলানা আলাউদ্দিন তার কাগজপত্র দাখিল করেন।
এমন খবরে মাদ্রাসাসহ এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু তিনি তার এ ভুয়া নিয়োগের কাগজপত্র দিয়ে গোপনে উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এমপিওভুক্ত হন। বর্তমানে তার ইনডেক্স নম্বর গ-০০০১৬৩৯। এই ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমে তিনি গত তিন বছর ৭ মাসে সরকারী ১০ লক্ষ ২২ হাজার ৫১২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মাওলানা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু গত তিন বছর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি এর কোন প্রতিকার পায়নি। অভিযোগ রয়েছে সহ-সুপার মোঃ আলা-উদ্দিন বিভিন্ন দপ্তর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিচ্ছেন। মাওলানা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ এনে বুধবার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া নিয়োগ নেয়া মাওলানা আলা-উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন ইউনুস মাস্টার বলেন, সহ-সুপার পদে যিনি নিয়োগ নিয়েছেন তার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি সেমতে ২০০৪ সালের ২১ ডিসেম্বর আমতলী ইউএনও অফিসে একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল। তাকে আবুল কালাম নির্বাচিত হয়ে দুই বছর বিনা বেতনে চাকুরী করেছেন। কিন্তু মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তিনি সৌদি আরব চলে যান। এ সুযোগে ওই বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বোর্ডকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে আলাউদ্দিন ভুয়া নিয়োগ নিয়েছেন।
সহ-সুপার পদে ভুয়া প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মাওলানা মোঃ মানজুরুল হক বলেন, ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়াতো দুরের কথা ওই পদে আমি আবেদনই করিনি।
অপর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সিটে আমার নাম ব্যবহার এবং আমার স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। আমি কোনদিনই ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে আবেদন এবং নিয়োগ পরীক্ষা দেয়নি। ভুয়া নিয়োগ পত্রে আমার নাম ব্যবহার করায় আমার মান ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি এ ঘটনার তদন্তপূর্বক শাস্তি দাবী করছি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন নিয়োগ বোর্ড ভুয়া হতে পারে স্বীকার করে বলেন, এগুলো আপনে ( সাংবাদিক) দেখার কে? এনিয়ে আনেক হয়েছে। আর কোন তথ্য দেয়া হবে না। আপনার ( সাংবাদিক) দরকার হলে প্রতিষ্ঠানে এসে জেনে যান।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান সুপার মোঃ মাহবুব আলম নাশিরের মুঠোফোনে (০১৭১১১৩৫৯৩১/ ০১৩০৯১০০০৬৪) যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার টুম্পা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত বোর্ড গঠন পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আকাশজমিন/এসআর