অনলাইন রিপোর্টার: বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় বৃহস্পতিবার ঢাকার অবস্থান প্রথম। আজ বৃহস্পতিবার(৯ মার্চ)সকাল পৌনে ১০টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৯৪ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল।এর আগে গত বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন বায়ুদূষণে শীর্ষ নগরী ছিল ঢাকা। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় ১৮৪ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণের দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারতের কলকাতা। ঢাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারি মাসে মোট ৯ দিন রাজধানীর বায়ুর মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ধারা এখনো অব্যাহত।
আজ সকাল পৌনে ১০টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে পাকিস্তানের করাচি, স্কোর ১৮১। একই স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছে থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই। আর ১৭৮ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে মিয়ানমারের ইয়াংগুন।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের তালিকা প্রকাশ করে।
বাযু দূষনের উৎস –
কার্বন মনোক্সাইড(CO) : পেট্রোল, ডিজেল এবং কাঠ সহ নানা ধরনের কার্বন-যুক্ত জ্বালানি আধপোড়া হলে এই রঙবিহীন গন্ধবিহীন গ্যাসটি তৈরি হয়। সিগারেট পোড়ালেও এই গ্যাস বের হয়। এই গ্যাস আমাদের রক্তে অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এই গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের প্রতিবর্ত ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সব সময় ঝিমোনো ভাব আসে। বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতারও শিকার হতে হয়।
কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) : মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে নির্গত প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাস। কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে নির্গত হয়।
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) : মূলত রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনিং মেশিন থেকে এই গ্যাস নির্গত হয়। বাতাসে এই গ্যাস নির্গত হওয়ার পরে স্ট্র্যাটেস্ফিয়ারে চলে যায়, সেখানে অন্যন্য গ্যাসের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির বিকিরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বাভাবিক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লেড বা সিসা : এই পদার্থটি লেড ব্যাটারি, পেট্রোল, ডিজেল, হেয়ারডাই, রঙ প্রভৃতি পণ্যে পাওয়া যায়। সিসা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের ক্ষতি করে থাকে। এটির প্রভাবে হজমের প্রক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্যানসারও হতে পারে।
ওজোন : ওজোন বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরে পাওয়া যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসের চাদর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ থেকে পৃথিবীকে বাঁচায়। কিন্তু মাটির কাছাকাছি এই গ্যাস অত্যন্ত বিষাক্ত ধরনের। মাটির কাছাকাছি যে ওজোন পাওয়া যায় তা মূলত কলকারখানা এবং যানবাহন থেকে নির্গত হয়। ওজোনের প্রভাবে চুলকানি হয়, জ্বালা করতে পারে। ওজোনের প্রভাবে ঠাণ্ডা লাগার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) : এই গ্যাসের প্রভাবে ধোঁয়াশা তৈরি হয় এবং অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। পেট্রোল, ডিজেল, কয়লার মতো জ্বালানি পোড়ানোর ফলে এই গ্যাস নির্গত হয়। নাইট্রোজেন অক্সাইডের প্রভাবে বাচ্চাদের শীতের সময় সর্দিকাশি হতে পারে।
সাসপেনডেড পার্টিকুলার ম্যাটার (SPM) : ধোঁয়া, ধুলো, বাষ্প এবং একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন পদার্থের কণাকে এসপিএম বলে। এটি বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। ধোঁয়াশা একটা অন্যতম কারণ এসপিএম। এসপিএম বেশি থাকলে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হয়। এই ধরনের পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শরীরের এই অন্যতম প্রধান অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে সমস্যারও সৃষ্টি করে।
সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) : মূলত তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর ফলে এই গ্যাস নির্গত হয়। অনান্য শিল্পজাত প্রক্রিয়ার ফলেও এই গ্যাস নির্গত হয় যেমন কাগজ উৎপাদন পদ্ধতিতে, ধাতু গলানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি। এই গ্যাস অ্যাসিড বৃষ্টি এবং ধোঁয়াশা সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ। সালফার ডাইঅক্সাইডের প্রভাবে ফুসফুসের নানা ধরনের জটিল রোগ হয়।