আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এতদিন ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করে আসছিল যে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া রকেটগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধ্বংস করতে সফল হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার, রাশিয়া একটি নতুন চমক দেখিয়েছে।
সারাদেশে লক্ষ্যবস্তুতে ভোরবেলার একটি আক্রমণে, রাশিয়ান বাহিনী দৃশ্যত বেশ কয়েকটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করেছে, যা কিনঝাল নামে পরিচিত, রাশিয়ান এ শব্দের অর্থ ড্যাগার বা ছুরি। অসহায় ইউক্রেনীয় বাহিনী বলেছে যে, তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা কিনঝালকে থামানোর ক্ষমতা রাখে না। কারণ এটি তাদের রাডারের চোখে প্রায় ‘অদৃশ্য’। -সূত্র: এনপিআর, বিবিসি।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া এর আগে কখনও কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করেনি। এটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। হামলার পর রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকফ বলেছেন, ‘দীর্ঘ পাল্লার অত্যন্ত নিখুঁত অস্ত্র, যার মধ্যে কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইলও রয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাত করেছে।’
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সবশেষ এ হামলায় বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এরকম আগে কখনও হয়নি।’ বায়ুমণ্ডলের উচ্চতম স্তর দিয়ে এ মিসাইল শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুত গতিতে চলে। রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্তত আরও পাঁচটি দেশ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার বর্ষপূর্তির দু’সপ্তাহ পরে এই হামলা চালানো হলো। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, রাশিয়া ৯০টির মতো মিসাইল ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ড্রোনের সংখ্যা আটটি, এবং চারটি ড্রোন ইরানের তৈরি। দেশটির ২৭টি অঞ্চলের অন্তত ১০টিতে বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে এসব আক্রমণ চালানো হয়। রাশিয়ার ছোড়া এসব মিসাইল ও ড্রোনের ৩৪টিকে গুলি করে আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে ইউক্রেন দাবি করছে।
এ হামলার ফলে ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরোজিয়ায় বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন শহরেও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ইউক্রেনের জাপোরোজিয়া অঞ্চলের কিছু অংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে। এ অঞ্চলে রাশিয়ার নিযুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন সেখানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনাকে তারা ‘উস্কানিমূলক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
রাজধানী কিয়েভ, উত্তরের খারকিভ এবং দক্ষিণের ওডেসার মতো বড় বড় শহরেরও অনেক জায়গায় এখন বিদ্যুৎ নেই। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলছেন, তার শহরের ৪০ শতাংশ বাসিন্দাদের বাড়িতে এখন হিটিং নেই। কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে মেরামতের কাজ চলছে। কিয়েভের বাসিন্দারা বলছেন যে বুধবার রাতে তারা সাত ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্ক সঙ্কেত শুনেছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে এসব হামলায় কমপক্ষে ন’জন প্রাণ হারিয়েছেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় লাভিভে মিসাইলের আঘাতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে সেখানে আরো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষ বলছে খেরসন ও দিনিপ্রপেত্রোভস্ক শহরেও রাশিয়ার গোলাবর্ষণে আরো তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। ইউ/কি