অনলাইন রিপোর্টার
দু’সপ্তাহ পর শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। অথচ রোজার আগেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। এমনিতেই সাধারণ পেশাজীবীদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। জমানো পুঁজি ভেঙ্গে, ধার-দেনা ও ঋণ করে টানাপড়েনে সংসার চালাচ্ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। তার মধ্যে রোজার আগে যে হারে দাম বাড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত আকাশছোঁয়া এই দাম কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়েই যত চিন্তা মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আগে থেকে বাড়তি চিনি, তেল, আটা-ময়দা, মাছ, গোশতের দাম। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে কোনো পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পেশাজীবীরা বলছেন, তাদের আয় বাড়েনি অথচ খরচ বেড়েছে। এখন রমজানে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়লে তাদের জন্য ইফতার-সেহরির খাদ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, রমজান মাসে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এ আস্থা মানুষের মধ্যে নেই।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করেছেন, রমজানে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। রমজানে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়বে না। তবে আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারদর নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজারদরের ওপর। সেক্ষেত্রে দেশীয় বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে রমজানে কেউ পণ্যের অবৈধ মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারি তৈরিতে সাধারণত ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসনের বেশি ব্যবহার হয়। গত কয়েকদিনে এসব পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। এমনকি শরবত তৈরির জন্য যে ট্যাং লাগে বাজারে সেটার এখন রীতিমতো সংকট। যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, তারা বিক্রি করছেন গত রমজানের থেকে কেজি প্রতি প্রায় ২০০ টাকা বেশি দামে। বর্তমান বাজারে ট্যাং ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে, যা এখন ৯৫-১০০ টাকা।
এদিকে গতকালও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রজমান মাস উপলক্ষে এক কোটি পরিবারকে (৫ কোটি মানুষ) তেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলাবুট সাশ্রয়ী দামে দেওয়া হবে। কিন্তু মন্ত্রীর কথায় আস্থা রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ। কারণ টিসিবির মাধ্যমে যে পণ্য বিক্রি করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। মানুষ টিসিটির ট্রাকের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও রমজান মাসে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক করেছে। এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করেছে। রমজান শুরু হওয়ার আগেই বাজারে রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও খেজুরে সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে তার ওপর নজর রাখার কথা বলেছে। বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বলা হচ্ছে, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ১০টি সংস্থা মাঠে থাকবে। ১৫ পণ্যের দাম বেঁধে দিতে কমিটি করা হবে। এবার এক মাস আগে থেকেই বাজারে আছে টিসিবি। কিন্তু কোনো উদ্যোগে সুফল পায়নি ক্রেতারা। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফার্মের মুরগির দাম বাড়ানো নিয়ে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। পোল্ট্রি শিল্পের মালিকরা জানাচ্ছেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। কর্পোরেট হাউজগুলো সিন্ডিকেট করে এই দাম বাড়িয়েছে। রাতে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এসএমএস করে এক জায়গা থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সে দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ সরকারের দায়িত্বশীলরা নীরব। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম না কমলে আমদানি মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হবে। আমি বিশ্বাস করি নিঃসন্দেহে মুরগির দাম পড়তির দিকে থাকবে।
ইউ/কি