বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন

দিনাজপুরে ৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ৩:১২ pm

দিনাজপুর সংবাদদাতা
লিচুর রাজ্য দিনাজপুর জেলায় এবার ৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রসালো ফল লিচু অনেকের কাছে ‘রসগোল্লা’ হিসেবে পরিচিত।
জেলার সব কয়েকটি উপজেলায় দিন-দিন লিচু বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিটি লিচু গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায়-থোকায় মুকুল।
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচু বাগানের মালিক গোলাম মোস্তফা জানায়, প্রতিবছর দিনাজপুর লিচু জেলা হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পরিচিতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত লিচু সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই লিচু সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তার নিজের দেড় একর জমির উপর লিচুর বাগান রয়েছে। তার বাগানে ১৩৭টি লিচুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি দিনাজপুরে সনামধন্য বেদনা লিচুর গাছ। অপর ৮৫টি মাদ্রাজী, বোম্বাই ও স্থানীয় জাতের কাঠালী লিচু রয়েছে।লিচু গাছে খুব ভালোভাবে মুকুল এসেছে। কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার লিচুর ফলন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তার বাগান নিজে পরিচর্যা করছেন। লিচুর ফলন ধরে রাখতে গাছে ভিটামনি জাতীয় স্প্রে করছেন। তার সাথে বাগানে সেচ দিয়ে গাছের গোড়া ঠিক রাখছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ফল নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত কৃষিবিদ সহকারী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, গত বছর প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকায় জেলায় চায়না-৩ লিচু হয়নি। এবার লিচু চাষিদের আগাম পরামর্শ দিয়ে চায়না-৩ লিচু বাগানে গাছের গোড়ায় গোবর সার ও পানি সেচ দিয়ে এই লিচুর গাছগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য লিচুর মুকুল বছরে বসন্তের ফাল্গুন মাসের আগে মুকুল আসে। চায়না-৩ ফাল্গুন মাসে প্রথম সপ্তাহ শেষে মুকুল আসতে শুরু করে। তিনি সদর উপজেলা ও পাশবর্তী বিরল উপজেলায় গত কয়েকদিন বাগান গুলো পরিদর্শন করেছেন। এবারে চায়না-৩ লিচুর গাছে মুকুল আসছে। বাম্পার ফলন জাতে পাওয়া যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে লিচু বাগান মালিকদের পরার্মশ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সরকার দিনাজপুরে সুস্বাদু লিচু পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলাতে লিচু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানকার লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। এবার দিনাজপুরের লিচু পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে রফতানি করা হবে। লিচু গাছে মুকুল এসেছে। আশা করা হচ্ছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন আরো ভালো হবে। লিচু বাগান মালিকদের লিচুর মুকুল আসার পূর্ব থেকে তাদের ভালো ফলন পেতে কৃষি বিভাগ থেকে মাঠ কর্মীদের মধ্যে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে। লিচুর ফলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কৃষি বিভাগ বাগান মালিকদের সহযোগীতা করবেন এবং কর্মকর্তারা তদারকি চালাবেন।
সুত্রটি জানায়, দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না-৩, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি ও কাঠালী উল্লেখয্যেগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকেরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙিনার লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের সঙ্গে ফুলে-ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁ-ঝিঁ পোকার ডাকে এলাকা মুখরিত হতে শুরু করেছে।
লিচু বাগানগুলোতে ফুল আসা থেকে লিচু নামানো পর্যন্ত ৩-৪ মাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পরে সেচ দিতে হয়। সেই অনুযায়ী গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলকে টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা স্প্রে করে চলছেন। এছাড়াও মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দেয়া হচ্ছে।
দিনাজপুরের যেসব স্থানে লিচু চাষ হয় তার মধ্যে সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলা বিখ্যাত।
দিনাজপুর বিরল উপজেলার লিচু চাষি মতিউর রহমান জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই পরিচর্যা শুরু করে দিতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেয়া শুরু হয়েছে। লিচু গাছগুলোতে ফুল আসতেই গত কয়েকদিন আগে থেকেই রাজশাহী, রংপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাফয়েত হোসেন জানান, কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কোন সময়ে কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাম্পার লিচুর ফলন অর্জিত করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ লিচু বাগান মালিকদের সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছেন। আর /জে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD