ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ব্রহ্মপুত্র নদ বিধৌত দেশের পুরাতন নগরীগুলোর অন্যতম ময়মনসিংহ আজ এক উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশে যোগদিতে এই অঞ্চলের উৎসুক জনতার ঢল নামে ময়মনসিংহে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন শতভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সকলের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। কে দিয়েছে এই মোবাইল ফোন? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই মোবাইল ফোন দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ওয়াই-ফাই এসেছে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের ক্ষমতা থাকা মানেই মানুষকে শোষণ করা, বঞ্চনা করা। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে উপহার দেয় উন্নয়ন। আমরা আজ শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে। আমরা নতুন নতুন স্কুল করেছি। ২৬ হাজার নতুন প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ করেছি। আজকে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২ শতাংশ।
তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত তখন লুটপাট, বোমা হামলা, জঙ্গিবাদ মানুষ হত্যার মতো কাজ করে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। বিএনপির ক্ষমতা থাকা মানে নির্যাতন, লুট করা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন উপহার দেয় আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নির্যাতন করে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নাকি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি শুধু অঙ্ক আর উর্দুতে পাস করেছেন। উর্দু পাকিস্তানের ভাষা-এটা তার খুব প্রিয় ভাষা। আর অঙ্কতো টাকা গোণা লাগে-ওই দুইটাতেই পাস করেছেন আর কোনোটাতে পাস করতে পারেনি। জিয়াউর রহমান ছিল মেট্রিক পাস। তাদের ছেলে একবার এই স্কুল ওই স্কুল শেষ কী পাস করেছে কেউ জানে না।
দুপুর আড়াইটার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেলা ৪টার দিকে নেতাকর্মী সমর্থকে কানায় কানায় পূর্ণ জনসভাস্থলে বক্তব্য দিতে ওঠেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের শুরুতে ময়মনসিংহ বিভাগের ৭৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার মাসে এগুলো সরকারের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহবাসীর জন্য উপহার বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ময়মনসিংহ বিভাগ করা হয়। ময়মনসিংহে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি। শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনতা সকাল থেকে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাট থেকে নানা রঙের ব্যানার প্লাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে নানা শ্লোগান দিতে দিতে মযমনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে জনসমাবেশ স্থলে আসেন। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখা এবং তার বক্তব্য শোনা। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর শেখ হাসিনা এই একই স্থানে দলের জনসমাবেশ ভাষণ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাচঁ বছর পর তিনি আবার সেই একই স্থানে জনসমাবেশে ভাষণ দিতে আসেন। ময়মনসিংহ জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ নগরীর সাকির্ট হাউজ মাঠে এই জনসমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সমগ্র ময়মনসিংহ সেজেছে বণার্ঢ্য সাজে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে নগরীর সড়কে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়। নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে যায় নগরী। সর্বস্তরের জনতা এবং আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা উৎসব মুখর পরিবেশে স্লোগান দিতে দিতে ও ড্রাম পিটিয়ে শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দেন। শুধু ময়মনসিংহেরই নয় আশেপাশের সকল অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ উপলক্ষে আজ ভোর থেকে হাজার হাজার লোক সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সাকির্ট হাউজ মাঠ এবং আশপাশের সকল সড়ক ও খালি স্থান সমূহ মানুষে ভরে গিয়ে ময়মনসিংহ নগরী একটি বিশাল জনসমূদ্রে পরিনত হয়। সাকির্ট হাউজ মাঠে নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছুলে লাখো জনতা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।
এর আগে সকাল থেকে নারী পুরুষসহ সাধারণ মানুষ ও দলীয় সমর্থকরা বাদ্য বাজিয়ে নানা রঙের টি শার্ট পরে মাথায় ক্যাপ লাগিয়ে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। নারীরা একই রঙের শাড়ি পরে খন্ড খন্ড মিছিল করে হাস্যোজ্জল মুখে সমাবেশ স্থলের প্রবেশ করেন।
নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সুসজ্জিত তোরণ নির্মাণ ও ব্যানার টানানো হয়। এ সব তোরণে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ছবি শোভা পায়। নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পেস্টার দিয়ে নগরী সাজানো হয়।