সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

বন্ধ হয়ে গেল আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যা‌‌ঙ্ক !

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ৯:০৬ pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বন্ধ হয়ে গেল আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক। শুক্রবার আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লোকসানের কারণে ব্যাঙ্কের বড় সংখ্যক শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। এমনকী বলা হয়েছে, ব্যালান্স শিটে ঘাটতি মোকাবিলায় নতুন করে আরও ২২৫ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। এরপরই ভেনচার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত ব্যাঙ্কটি আগেই গ্রাহকদের সমস্ত অর্থ তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এখন ইউএস ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন ব্যাঙ্কটির নিয়ন্ত্রণ নেবে। এরপর এফডিআইসি প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারী এই ব্যাঙ্কটির সম্পত্তি বিক্রি করে সেই অর্থ গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাঙ্ক’ বন্ধ হয়েছিল। এরপর হল সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক। শুক্রবার সকালে সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের শেয়ার বেচাকেনা বন্ধের পাশাপাশি ‘ফার্স্ট রিপাবলিক’, ‘প্যাকওয়েস্ট ব্যানকর্প’ ও ‘সিগনেচার ব্যাঙ্কের’ শেয়ার বেচাকেনা সাময়িক স্থগিত রাখা হয়।
স্টার্টআপের জন্য ঋণ দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) গত বুধবার এক ঘোষণা দেয়, ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র শক্তিশালী করতে তারা ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করবে। কিন্তু এই এক ঘোষণাই যে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে, সে কথা কে জানত।

বিষয়টি হলো, এ ঘোষণায় ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিন ব্যাংকটির শেয়ারের দর ৬০ শতাংশ কমে যায়। গত বৃহস্পতিবার আমানতকারীরা তুলে নেন ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বিনিয়োগকারীরা ভাবেন, এ ঘোষণায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যেতে পারে। ফলাফল: গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। ব্যাংকের সব আমানতের দায় এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে। পুরো ঘটনার কালিক ব্যাপ্তি মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। রয়টার্সসহ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম কোনো পশ্চিমা ব্যাংক এভাবে বন্ধ হয়ে গেল। শুধু তা–ই নয়, এটা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ধস। এর কারণ অন্য কিছু নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি। এত দিন মূলত মূল্যস্ফীতির মধ্যেই এর প্রভাব সীমিত ছিল। বলা যায়, সামষ্টিক অর্থনীতিতে এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রভাব। বিষয়টি হচ্ছে, গত বছরের শুরুতেই ফেডের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনজনিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় গত এক বছরে ফেড আটবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সে দেশের বন্ডের সুদহার বেড়েছে। ঋণ ও বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ার সম্মিলিত ফল হলো, বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় বিনিয়োগ করার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে, বরং বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, আরামে সুদ খাওয়া যাবে।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীরা স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় সিলিকন ভ্যালির এ স্টার্টআপগুলো সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে রক্ষিত আমানত ভেঙে খেতে শুরু করে। তাতে সিলিকন ভ্যালির ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। এ বাস্তবতায় এসভিবি গত বুধবার ২১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বন্ড বিক্রি করে, যার সিংহভাগই ছিল মার্কিন ট্রেজারি বন্ড। এর সুদহার ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ, অথচ ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার প্রায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে বন্ড বিক্রি মুখ থুবড়ে পড়ে। তাদের ক্ষতি হয় ১৮০ কোটি ডলার।

এরপর সেই ক্ষতি পোষাতে বৃহস্পতিবার এসভিবি ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের ইকুইটি বিক্রির ঘোষণা দেয়। বলা যায়, এটা ছিল কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার মতো। হুড়মুড়িয়ে আমানত তুলে নিতে শুরু করেন আমানতকারীরা। পতন হয় ৪০ বছরের পুরোনো এই ব্যাংকের।

গুজব ও ব্যাংক ধস
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করে গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নানকে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিলিপ এইচ ডিবভিগ।

আধুনিক কালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ছিল ১৯৩০-এর দশকের সংকট। ২০২২ সালের নোবেল বিজয়ী বেন বার্নানক সেই সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক আমানতকারী একসঙ্গে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়ায় (ব্যাংক রান) ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকট গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD