অনলাইন রিপোর্টার
গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার আগে সেখানে গ্যাস জমে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল। আলো-বাতাস না ঢুকতে পারা সেই বেজমেন্টে সিগারেট জ্বালিয়েছিল কেউ। সেই আগুন থেকে প্রথমে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়, পরক্ষণেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। যার বেগ এতই বেশি ছিল যে, ভবনের ইট-কাঠ ফেটে গম্বুজের মতো ওপরের দিকে তিনতলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, শনিবার রাতে গ্রেপ্তার তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদে এবং দুই সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে এমনটা ধারণা করছেন। তবে গ্যাস তিতাসের পরিত্যক্ত লাইন থেকে বের হয়ে আসে, নাকি দীর্ঘদিন ধরে সেপটিক ট্যাঙ্কে জমা বায়ো গ্যাস ছিল, সেটা নিশ্চিত হতে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিয়ে বলছেন, বিস্ফোরণে বাংলাদেশ স্যানিটারি ও অনিকা এজেন্সি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুটি দোকানই উড়ে যায়। বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে দুদিন পর উদ্ধার করা হয় অনিকার এজেন্সির মালিক মমিন উদ্দিন সুমন ও তার কর্মচারীদের। গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, বিস্ফোরণের আগে সেদিন সুমনই সিগারেট ধরিয়েছিলেন। এসব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এখনো বিষয়গুলো গুছিয়ে আনতে পারিনি। তদন্ত শেষ হলেই আসল ঘটনা জানা যাবে।
গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সিদ্দিকবাজারের ওই সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেজমেন্ট, নিচতলা ও দোতলা অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুই পাশে লাগোয়া দুটি ভবনের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনের সামনের সড়কে থাকা পথচারী বা যাত্রীরাও হতাহত হন। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আহত, ভবন ও দোকান মালিক এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এখন পর্যন্ত তাদের পর্যবেক্ষণ, ভবনে আগের হোটেলের রান্নাঘরের গ্যাসের লাইনটি সারেন্ডার করলেও পুরো ভবনে ছিল আবাসিক গ্যাস লাইন। বেজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলে সেখানে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ স্কয়ার ফিটের এ আন্ডারগ্রাউন্ডটি পুরোটাই কাচে ঘেরা।
সেখানে ছিল না কোনো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। বড় দুটি এসির মাধ্যমে ঠান্ডা রাখা হতো দোকানটি। এসিগুলো ২০১০ সাল থেকে সার্ভিসিং করা হয়নি। সাততলা ভবনের কোথায় স্যুয়ারেজ সেপটিক ট্যাঙ্ক অবস্থিত সে বিষয়ে ভবনের মালিকরাও সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। ধারণা করা হয়, উত্তর পাশের ভবনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের যে আড়াই থেকে তিন ফিট গলি আছে, সেখানে একই সঙ্গে দুটি ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্ক অবস্থিত।
আকাশজমিন/ আরজে