অনলাইন রিপোর্টার
৭ মার্চের সমাবেশের পর থেকে আন্তর্জাতিক নানা সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন শুরু হতে থাকে। এদিন সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে সারা আলীর তোপখানা রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত মহিলা পরিষদের এক সভায় পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। প্রতিরোধের অংশ হিসেবে নারীদের সংগঠিত হওয়া সাড়া ফেলেছিল।
এদিকে লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এক প্রতিবেদনে শক্তি প্রয়োগ নিষ্ফল ও বিপজ্জনক হবে বলে মন্তব্য করে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক।
রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ অনুষ্টিতব্য পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ কোন পথে এগুচ্ছে সেই ধারণা করতে না পারা এবং আন্দোলনের মুখেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনও এদিন নতুন রূপ নেয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকা’সহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনুদান দেন।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবর রহমান কখনওই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’ বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে ১ কয়েদী নিহত ও ১৫ জন আহত হয়।
১৯৭১ সালের ১২ মার্চের ঘটনা ১৩ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। সেদিনের মূল খবরের শিরোনাম ছিল, ‘আমি তার স্বরে এই হুঁশিয়ারিই উচ্চারণ করিয়া যাইবো’। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খানের বক্তব্য এটি। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পশ্চিমাঞ্চল কিছুতেই পাঁচ বছরের বেশি টিকে থাকতে পারবে না।’
বিস্তারিত খবরে আরও বলা হয়, ঢাকা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর ১২ মার্চ দ্বিতীয় সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ২৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া বক্তৃতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দোষ করা হলো লাহোরে, বুলেট বর্ষিত হলো ঢাকায়। এটাই ভাগ্যের পরিহাস। যারা শক্তিবলে পূর্ব পাকিস্তানিদের দাবিয়ে রাখার কথা বলছেন তারা এতই খাটো বুদ্ধির যে, তারা কী বলছেন তা তারা ভালো করে জানেন না।’
একের পর এক প্রতিবাদের নতুন ধরণ হাজির হয় স্বাধীনতাকামী জনতার সামনে। এই দিনে জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তথ্য বলছে, প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রেরিত খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠ ও নিন্দা প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন সরকারি আধাসরকারি কর্মচারিদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানোর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে।
দৈনিক পাকিস্তান এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে এক দিনের বেতন অনুদান দেন তারা।
আকাশজমিন/আরজে