রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা: তদন্ত কমিটি

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ১২:৫৮ am
জাফর আলম, কক্সবাজার সংবাদদাতা:  কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চ দুপুরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত, নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
রবিবার (১২ মার্চ) বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান এ তথ্য জানান।
এ সময় তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।তিনি বলেন, কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বা এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো ঘটনার জের ধরে আগুন দেয়ায় ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে কারা আগুন লাগিয়েছে, তাদের নাম পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলার পর তদন্ত করে জড়িতদের শনাক্ত করা জরুরি জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে কমিটি।তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মামলা দায়েরসহ নিয়মিতভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে।  ৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে।
তদন্তকালে তদন্ত কমিটি অনন্ত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেছে। এসব রোহিঙ্গারা বলছেন এটা পরিকল্পিত নাশকতা। এসব রোহিঙ্গারা যে সব তথ্য দিয়েছে, যে নাম পাওয়া গেছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন নাম বলেছে। ফলে এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার পর তদন্ত করে তাদের শনাক্ত করার পক্ষে তদন্ত কমিটি।
আবু সুফিয়ান আরও জানান, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে এক স্থানে না, অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক স্থানে আগুন লেগেছে। এটা নাশকতার প্রমাণ করে। একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটাও নাশকতা প্রমাণ করেছে। আগুন রোহিঙ্গারা নেভাতে গেলে অনেকেই নিষেধ করেছে এটা সত্য। তবে এটা কৌশলে হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, ‘আগুন নেভানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরি’। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে জড়িতদের শনাক্ত করতে মামলা করা জরুরি বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারে এমন প্রশস্ত করা যেতে পারে। ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত থাকা এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত থাকা, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি।
ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা।গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে ঘরসহ ২ হাজার ৮০৫টি নানা স্থাপনা এবং ১৫ হাজার ৯২৫ জন রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ৫ শতাধিক। পুড়ে যায় ৯ হাজারেরও বেশি ঘর।
আকাশজমিন/এসআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD