আকাশজমিন প্রতিবেদক।। অবশেষে অস্ট্রেলিয় প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখিকা মিলি রহমানের কথাই সত্যি হলো। কিছু দিন আগে মিলি রহমান অভিযোগ করে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন যে নায়ক শাকিব খান সেখানে এক নারী প্রযোজকের শ্লীলতাহানী করেছেন। মান সম্মানের ভয়ে সেই প্রযোজক নাকি এ বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্ত এবার সত্যি বিষয়টি সামনে এনেছেন আরেক প্রযোজক।
জানা যায় আশিকুর রহমান ২০১৭ সালে শাকিব খানকে নিয়ে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন। সিনেমাটির শুটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন শাকিব খান। কিন্তু মাঝপথে সিনেমাটি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে এতদিন পরিচালক-প্রযোজক কোনো কথা না বললেও এবার প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। একই সঙ্গে দিয়েছেন মামলার হুমকি।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে জমা দেয়া লিখিত এক অভিযোগে তিনি শাকিব খানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর একজন নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। ১৫ মার্চ তিনি এ অভিযোগপত্র জমা দেন। লিখিত অভিযোগে তিনি দাবি করেন শাকিব এ অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। শাকিবের বিরুদ্ধে ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তদন্ত করেছে এবং প্রয়োজনে এ সম্পর্কিত নথি তিনি সরবরাহ করবেন বলেও জানান।
তিনি অভিযোগপত্রে লেখেন, ২০১৭ সালে পূর্বচুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশান অগ্নিপথ’-এর কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় নির্মিত প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিলো সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে। তিনি চলচ্চিত্রটির শুটিংয়ের সময় শাকিব কী ধরনের অসহযোগিতা ও অপেশাদার কাজ করেছিলেন তার একটি তালিকাও দেন।
সে তালিকের শুরুতেই বলেন, পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও কোন রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন শাকিব। তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্য। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চচিত্র নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিলো। শাকিব শুটিংয়ে নিজের ইচ্ছে মতো আসতেন বলেও অভিযোগ করেন রহমত উল্ল্যাহ। তিনি দাবি করেন, ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে তার জন্যে অপেক্ষা করতে হতো ইউনিটের। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্যে আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে তারা শুধু আপেক্ষা করতেন শাকিব আসবেন বলে।
শাকিবকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো বলেও অভিযোগপত্রে লেখেন তিনি। আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অষ্ট্ৰেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হত বলেও অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়। তিনি লেখেন, এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। একবার ভেবে দেখুন, শাকিব খানের মতো একজ অতি পরিচিত চলচ্চিত্রশিল্পীর যৌন ইমার্জেন্সিগুলো তার গোপনীয়তা বজায় রেখে সমাধান করে দিতে আমাদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় শুটিং করতে এসে যদি শাকিব খান কোন একটি ব্যাপারে নিয়মিত থেকে থাকেন, তবে তা হলো রমণীসঙ্গ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই সকল যৌনকর্মীদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো।
রহমত উল্ল্যাহ অভিযোগপত্রে দাবি করেন, শাকিব খানকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম পারিশ্রমিক দেয়ায় এবং অনেক ডলার বিনিয়োগ হয়ে যাওয়ায় তারা এ সকল ‘নির্যাতন’ সহ্য করেছেন। তারা চেয়েছিলেন কাজটি যেন শেষ হয়।
সবশেষ অভিযোগে শাকিব খান কৌশলে সিনেমাটির একজন নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণ করেন বলে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ। তিনি লেখেন, ভুক্তভোগী ওই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করলেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। (মামলা নং: NSW Police reference no: E 62494959) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে। চুপিসারে চলে যান। এরপর থেকে শাকিবের সাথে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।
এ ধর্ষণের মামলায় শাকিব খান ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বলে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ। তবে সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান বলেও তিনি জানান।
এ অভিযোগের ব্যাপারে শাকিব খান ও আশিকুর রহমানের বক্তব্য জানতে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে রহমত উল্ল্যা বলেন, আমরা এতদিন চেয়েছিলাম সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু মিটমাট করে ফেলতে। কিন্তু তা করেননি শাকিব খান। আমাদের ছবিটির বাজেট ছিল ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ১৫ দিন শুটিংয়ে আমাদের ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এখন এ টাকা ফেরত দিক অথবা ছবি শেষ করে দিক। কিন্তু উনি তার কিছুই করছেন না।
আপনাদের সঙ্গে চুক্তিতে কি ছবি শেষ না হলে বাজেটের টাকা ফেরত দিতে হবে এমন কোনো শর্ত ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে রহমত উল্ল্যা বলেন ‘না তা ছিল না। এরকম তো কেউ লিখে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু তার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এর ক্ষতিপূরণ দিবেন না তিনি’। শাকিবের সঙ্গে কত টাকা পারিশ্রমিকে চুক্তি হয়েছিলো তাও জানাতে পারেননি এ প্রযোজক।
তিনি দাবি করেন শাকিব বেশ কয়েকবার তাকে শিডিউল দিয়েও শুটিং করেনি। আর ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের প্রমাণপত্র দিতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নে রহমত উল্ল্যাহ বলেন, বিষয়টি আমার আইনজীবী দেখছেন। তার কাছে সবকিছু আছে। তার সঙ্গে কথা বলে আমরা আপনাদেরকে তা সরবরাহ করবো।
শাকিব যদি তাদের বাকি শুটিং না করে দেন অথবা টাকা ফেরত না দেন তবে তিনি মামলা করবেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘শাকিবের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশে। তাই মামলাও এখানে করবো।’
আকাশজমিন/এসএ