মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে রেলের জমিতে শত শত অবৈধ স্থাপনা

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ১১:৩২ am

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর ষোলশহর এলাকার রেললাইনের দুই পাশজুড়ে শত শত অবৈধ স্থাপনা। রেলওয়ের এসব জমি দখল করে দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে জমিদার বনে গেছেন অনেকে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২৮৫ দশমিক ৪৪৭ একর জমি (পুকুর ও জলাশয়) মৎস্য চাষের জন্য, ৪৪ দশমিক ৯৩ একর নার্সারির জন্য এবং অন্যান্য কাজে ৮৬৫ দশমিক ৪৩২৯ একর রেলভূমি লিজ দেওয়া হয়েছে।অবৈধ দখলদারদের হাতে পূর্বাঞ্চলের ৭১৮ একর জমি রয়েছে। দখল হওয়া জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, বস্তি, মার্কেট, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও ক্লাবসহ নানা স্থাপনা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগে জমির পরিমাণ সাত হাজার ৭০১ একর। দখল হয়ে আছে ২১৬ একর। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় চার হাজার ৬৫৪ দশমিক ৪৩ একর। যার মধ্যে ১৮৩ দশমিক ২৩ একর বেদখল।
ষোলশহর এলাকায় রেলের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন জিয়াউল হক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দুটি দোকান রয়েছে তার। দোকান দুটি ভাড়া দিয়ে হয়েছেন লাখপতি। রেলের জমিতে দোকান দেওয়ার বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন জমি খালি পড়েছিল। অন্যরা দোকান দিয়েছে, তাদের দেখে আমিও দোকান নির্মাণ করেছি। রেলওয়ের যখন প্রয়োজন হবে তখন ছেড়ে দেবো।’ তার মতো ষোলশহর এলাকায় অবৈধভাবে ৮০-৯০টি দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।নগরীর আমবাগান এলাকায় রেললাইনের পাশে দোকান নির্মাণ করেছেন নুরে আলম নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এই দোকান করছি। এর আগে আরেকজনের কাছ থেকে এই দোকানের দখল কিনে নিয়েছি। তবু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চাইলে ছেড়ে দেবো।’ একইভাবে আমবাগান এলাকায় রেলের জমি দখল করে অর্ধতাধিক ঘর তুলেছেন অনেকে। এগুলো ভাড়া দিয়েছেন তারা। ভাড়া তুলে এখন তারাও জমিদার। কেউ হয়েছেন লাখপতি আবার কেউ প্রভাবশালী।শুধু ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন কিংবা আমবাগান এলাকা নয়, নগরীর নতুন ও পুরনো রেলওয়ে স্টেশন, হালিশহর, পাহাড়তলী, জানআলী হাটসহ রেলের অধিকাংশ জমি দখল করেছেন অনেকে। বছরের পর বছর রেলের এসব জমি বেদখল হয়ে থাকায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। সেইসঙ্গে রেললাইনের দুই পাশে শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় মাঝেমধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা।গত পাঁচ মাসে ষোলশহর এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তিন বার উদ্যোগ নিয়েও উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এজন্য দিন দিন রেলের জমি দখল বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশের রেলওয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি পূর্বাঞ্চল অপরটি পশ্চিমাঞ্চল নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ এলাকা নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চল। রেলের পূর্বাঞ্চলে জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২১ হাজার একর। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ৭ হাজার ১০১ একর। বাকি জমি ঢাকা ডিভিশনের অধীনে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ২১৬ এবং ঢাকায় ৫০২-সহ ৭১৮ একর জমি দীর্ঘদিন বেদখল হয়ে আছে।’ রেলের জমি উদ্ধারে প্রতি বছরই একাধিক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় উল্লেখ করে সুজন চৌধুরী বলেন, ‘তবে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় অভিযান চালানো যাচ্ছে না। প্রতি বছর উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য ৮-১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এই টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে লাখ টাকার বেশি খরচ হয়।’ উচ্ছেদের পর আবার রেলের জমি দখল হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে সুজন চৌধুরী বলেন, ‘ভূ-সম্পত্তি বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান চালানো। সম্পত্তি দেখভালের জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। উচ্ছেদ করা জমি যাতে পুনরায় দখল না হয়, সেজন্য সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। কেন পুনরায় দখল হয়ে যায়, তা সম্পর্কে ওসব বিভাগের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।’ কেন পুনরায় দখল হয়ে যায় জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় উচ্ছেদের পর সীমানাপ্রাচীর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে গুরুত্বপূর্ণ জমি উচ্ছেদের পর যাতে পুনরায় দখল না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ আকাশজমিন/আরজে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD