রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

আজ আন্তর্জাতিক বন দিবস: বন্ধ করা যাচ্ছে না বনভূমি দখল

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ১২:৪৫ pm

আকাশজমিন ডেস্ক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বন বিভাগের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বন দখলের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, সারা দেশে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬ জন বনের জমি জবরদখল করে রেখেছেন। তাদের দখলকৃত বনভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর। এমনকি সংরক্ষিত বন দখলকারীর বন জবরদখলকারীর সংখ্যা ৮৮ হাজার ২১৫ জন। তাদের দখলের পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ দশমিক ০৬ একর জমি। এরমধ্যে স্থায়ী স্থাপনাসহ প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কল কারখানা ইত্যাদি দিয়ে দখল করা বনভূমি আছে ৮২০ দশমিক ৩৪ একর, আর দখলকারীর সংখ্যা ১৭২ জন। হাট-বাজার দোকান-পাট, রিসোর্ট বা কটেজ, কৃষি ফার্ম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে ৩ হাজার ৩২৯ জন দখল করে আছে ৪ হাজার ৯১৪ দশমিক ৪৩ একর বনের জমি। ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘর-বাড়ি, বসতভিটার পরিমাণ ৫৭ হাজার ৬৪১ দশমিক ০৩ একর, দখলকারীর সংখ্যা ৫৮ হাজার ৪০৭ জন। এছাড়া কৃষি জমি, চারণভূমি, বাগান, লবণ চাষ, পতিত ভূমি ইত্যাদি ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থায়ী স্থাপনাবিহীন ৭৫ হাজার ১৯৭ দশমিক ২৬ একর ভূমি দখল করেছেন ২৬ হাজার ৩০৭ জন।

বন অধিদফতর বলছে, এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এখন ১২ হাজার ২১৪ দশমিক ৯৩ একর জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পিওআর মামলা করা হয়েছে ৪ হাজার ৯৯২টি, নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলা আছে ২৪৫টি, উচ্চ আদালতে রিট মামলা করা হয়েছে ৬৮টি, উচ্চ আদালতে আপিল বা মিস মামলা আছে ৩৫টি, জেলা প্রশাসনে প্রেরিত উচ্ছেদ প্রস্তাব দেওয়া আছে ৩ হাজার ৪৪২টি, জেলা প্রশাসন কর্তৃক রুজুকৃত উচ্ছেদ মামলার সংখ্যা ১৩ এবং অন্যান্য হিসেবে আরও ৪ হাজার ৭৫৯টি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে বন অধিদফতর জানায়।

পরিবেশবাদীরা মনে করেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূখণ্ডের মোট আয়তনের অন্তত এক চতুর্থাংশ বনভূমি থাকা জরুরি। অথচ আমাদের দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ এই ‘প্রয়োজনের’ তুলনায় অনেক কম। আর এর পেছনে অন্যতম কারণ দখল। এমনকি দখলের থাবা থেকে বাদ যায়নি সরকারের ঘোষিত ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ও। খোদ বন বিভাগই বলছে, দেশের অন্তত ৮৮ হাজার ২১৫ জন সংরক্ষিত বন দখল করেছেন। তাদের দখলকৃত জমির পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ দশমিক ০৬ একর। এমন তথ্য থাকলেও বন বিভাগ দখলদারদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। জানা গেছে, দখল উচ্ছেদের চেষ্টা করলেই মামলা করে আটকে রাখা হচ্ছে সব কিছু। এক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
এমন এক পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী পালিত হতে যাচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক বন দিবস’। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় বন ও বনভূমির নিরাপত্তা রক্ষার্থে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বশ্বিব্যাপী প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয় দিবসটি। ‘সুস্থ শরীর সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দিবসটি উপলক্ষে বন ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে সচিব ফারহিনা আহমেদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। অন্যদের মধ্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী এবং অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বক্তব্য দেবেন বলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়।
এদিকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, বন না বাঁচাতে পারলে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবো না। বনের ভূমি প্রতিনিয়ত দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা বার বার উদ্যোগের কথা বললেও নানা কারণে দখল বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত আরও কঠোরভাবে এটি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া।
আকাশজমিন/আরজে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD