অনলাইন রিপোর্টার
রাষ্ট্রপতির রেল ভ্রমণে ব্যবহার উপযোগী চার কোচের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেলুনসহ ২০০ বগি ক্রয়ের আগেই হোঁচট খেল রেলওয়ে বিভাগ। ১২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের জন্য বগি ক্রয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু ওই টেন্ডারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রেলওয়ে বিভাগ কিনবে ২০০ বগি। অথচ তারা শর্তে চেয়েছে ৮০০ বগি তৈরি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রকল্পের এমন শর্ত নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ অবস্থায় দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আপত্তির মুখে অভিজ্ঞতার শর্ত পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকল্পে টেন্ডার দাখিলের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছরের মধ্যে ৮০০ বগি তৈরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর রেলওয়ের কাজে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় ৫ বছরের। এ অবস্থায় টেন্ডারে অংশগ্রহণে আগ্রহী একাধিক প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞতার শর্তে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প পরিচালককে লিখিতভাবে অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিলের আহ্বান জানিয়েছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণে আগ্রহীরা মনে করেন, যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা পূরণ করে বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না। এর কাজ পাবে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলামও বিষয়টি স্বীকার করে সোমবার বলেন, কিছু শর্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, সেসব শর্ত আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। দরপত্র দাখিলের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। সূত্র জানায়, যাত্রী পরিবহণে রেলের সক্ষমতা বাড়াতে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) ঋণে ২০০ ব্রডগেজ কোচ (বগি) কেনার উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। এগুলোর মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৮১ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় উল্লেখ রয়েছে, ২০০ কোচের মধ্যে চার কোচের এক সেট সেলুন কেনা হবে। এই সেটটি রাষ্ট্রপতির ভ্রমণে ব্যবহার উপযোগী। এর নিরাপত্তাব্যবস্থাও নিশ্চিদ্র। রাষ্ট্রপতির ভ্রমণ উপযোগী কোচ এই প্রথম রেলওয়েতে সংযোজন করার উদ্যোগ। এছাড়া কেনা হবে তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইনস্পেকশন কার, চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স স্লিপার কার, ২৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার, ৪২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার, ৮০টি শোভন চেয়ার কার, ১৬টি ডাইনিং ও নামাজের ব্যবস্থা সংবলিত শোভন চেয়ার কার এবং ২৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাগেজ ভ্যান সংবলিত পাওয়ার কার।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইকালে ধরনভেদে প্রতিটি কোচের একক দাম ধরা হয়েছিল যথাক্রমে ২৮ কোটি ২৩ লাখ, ৭ কোটি ৩ লাখ, ৮ কোটি ১৬ লাখ, ৫ কোটি ১১ লাখ, ৪ কোটি ৭১ লাখ, ৪ কোটি ১৮ লাখ, ৪ কোটি ১১ লাখ ও ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যদিও প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার সময় ধরনভেদে প্রতিটি কোচের একক দর বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫৩ কোটি ৯৪ লাখ, ১০ কোটি ১৭ লাখ, ৭ কোটি ৫১ লাখ, ৬ কোটি ৩৬ লাখ, ৬ কোটি ২৩ লাখ, ৫ কোটি ৭৮ লাখ, ৫ কোটি ৭৮ লাখ এবং ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ সব ধরনের কোচের দামই বাড়তি ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে কোচগুলোর দাম ৩৬৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের ২২ মার্চ এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সূত্র জানিয়েছে, ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম পড়ছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। রেলের সম্প্রতি কেনা কোচের চেয়ে এ ব্যয় ৪৩ শতাংশ বেশি। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে ২০১৭ সালে রেলওয়ে ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়। এর মধ্যে প্রতিটি ব্রডগেজ কোচের দাম পড়েছিল ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া গড়ে ৪ কোটি ৬০ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে গড়ে ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি কোচের দাম বেশি ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। আকাশজমিন/আরজে