সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

সৌদি আরব কেন চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ ৬:৩৪ am

আকাশজমিন ডেস্ক
সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-তে সৌদি আরব যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যকে চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগের মধ্যেই রিয়াদ এই সিদ্ধান্ত নিলো। সম্প্রতি সৌদি আরবের মন্ত্রিসভায় একটি সমঝোতা স্মারক অনুমোদনের পর এসসিও-এর আনুষ্ঠানিক সংলাপ অংশীদার হবে রিয়াদ। এসসিও হলো একটি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্লক। এতে রয়েছে চীন, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, আজারবাইজান, কম্বোডিয়া, মিসর, নেপাল, কাতার, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্ক। পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে বেলারুশ, মঙ্গোলিয়া ও আফগানিস্তান। তবে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর দেশটির অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। ব্লকটির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পেয়েছে ইরান। গত বছর সেপ্টেম্বরে পর্যবেক্ষক থেকে সদস্য হয় দেশটি। চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে চুক্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রিয়াদ এসসিওতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলো। সৌদি আরবের জন্য সিদ্ধান্তটি পরাশক্তিদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ। সাধারণভাবে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। সৌদি আরবের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ আলি আল-শিহাবি বলেন, রাজতন্ত্রের দেশটি পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের পরিপূরক হিসেবে কৌশল গ্রহণ করছে। চীন এবং বহুদেশীয় সংস্থাটি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হবে তা নয়, এতে ইরানের মতো সৌদি আরবও উপকৃত হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে এমন পরিবর্তনগুলো যখন ঘটছে তখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। শিহাবি বলেন, অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি শূন্যতা বা জোরদার সম্পর্ক বজায় রাখতে অনাগ্রহের কারণে সৌদি আরব পররাষ্ট্রনীতিতে বৈচিত্র্য আনার কৌশল গ্রহণ করেছে। চীন পারস্য উপসাগরীয় তেলের ওপর অনেক নির্ভরশীল। এটি বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি যে চায় উপসাগরীয় অঞ্চলের অবস্থা স্থিতিশীল থাকুক। আর তাই অস্থিতিশীল অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে চীনকে আরও সক্রিয় ভূমিকায় নিয়ে আসছে সৌদি আরব। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের কূটনৈতিক উদ্যোগে আসা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনও কথা বলেননি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। তিনি বলেন, এটি নতুন কোনও অগ্রগতি নয়। সৌদি আরবের এসসিও’র সংলাপ অংশীদার হওয়ার বিষয়টি অনেক দিন ধরে ঝুলে ছিল। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব সম্পর্ক রয়েছে এবং আমি এই বিষয়ে সৌদি সরকারকে কথা বলার সুযোগ দেবো। দুই বছর আগে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘বিচ্ছিন্ন’ হিসেবে উল্লেখ করা বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌদি আরবকে দেওয়া সামরিক সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দেন। এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নেয় যখন ইরান সমর্থিত আনসার আল্লাহ বা হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রিয়াদ। পরে তিনি আনসার আল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা বাদ দেন। যদিও বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবে গোষ্ঠীটির হামলার নিন্দা ও সমালোচনা করেছে নিয়মিত। বাইডেন সতর্ক করেছিলেন, এমন পদক্ষেপের পরিণতি থাকবে। একই সঙ্গে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক পর্যালোচনার নির্দেশ দেন। ওই সময়ে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এসসিওতে যোগদান নিশ্চিত করে ফেলেছে। সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এসসিও’র বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন। পাশাপাশি ইরান ব্রিকস-এ যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছে। চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে এটি আরেকটি জোট, যাতে রয়েছে ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

এই দুই সংস্থার ওপর নজর ছিল সৌদি আরবের। ডিসেম্বরে সৌদি আরব সফর করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানে তিনি প্রথম চীন-আরব দেশ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ওই সম্মেলনে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে এবং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক অগ্রগতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এক মাসেরও কম সময় পর ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরে গিয়ে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন রাইসি। মার্চ মাসে বেইজিং, রিয়াদ ও তেহরানের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, সৌদি আরব ও ইরান সাত বছরের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে যাচ্ছে। চীনের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির আরও জড়িয়ে পড়ার সুযোগ উন্মুক্ত করে। এরপর খবর প্রকাশিত হয়েছে, সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলোচনা শুরু করেছে সৌদি আরব। ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আরব লিগ থেকে সিরিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের মস্কো সফর, সেখানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনা এবং এর এক সপ্তাহ পর এসসিও মহাসচিব ঝাং মিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এই আলোচনার কথা সামনে এলো। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আজম আল-শাবাদি বলছেন, এসব অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কোনও ইঙ্গিত নয়। কোনও সন্দেহ নেই যে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের সম্পর্ক দুই দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত। দুই দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকার এই সম্পর্ক বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা অর্জনে চীনা মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সাংঘর্ষিক কিছু নেই। সূত্র: নিউজউইক
আকাশজমিন/আরজে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD