পিরোজপুর সংবাদদাতা
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চরাঞ্চলে বছরের এ সময়টিতে যেখানে ভোরের আলো ফোটার আগেই পরিবারের সকল সদস্য নেমে যান খেতে পানি দিতে। গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল বাঙ্গির চাষ করছে এ এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবার। মাঘ মাসের শুরুতে চারা রোপণের দেড় মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায় গাছ থেকে। ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর চাষিরা বাঙ্গি বিক্রি করে ভালো লাভের আশা করছেন। এ এলাকায় কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে বাঙ্গি উৎপাদন করায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পিরোজপুরের বাঙ্গির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় চাহিদাও বেশি। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পরিবহন খরচ একটু বেশি। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক দিন দিন ঝুঁকছেন বাঙ্গি চাষের প্রতি। অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় পিরোজপুরের চরাঞ্চলের হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল বাঙ্গি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় অধিক লাভের আশায় বুক বেধেছেন পিরোজপুরের চাষিরা। এছাড়া কৃষি বিভাগ বলছে ভালো ফলনসহ যেকোনো বিষয়ে চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে যাতায়াত সমস্যায় সঠিক দাম পান না পিরোজপুরের বাঙ্গি চাষিরা। তবে রসাল এই ফলটি মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে আগ্রহ দেখালেও পুষ্টিগুণে এর জুড়ি নেই। বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’, শর্করা ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। এছাড়া এই ফল বয়স ধরে রাখা, চুল পড়া কমানো, নতুন করে চুল গজানো, এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে। বাঙ্গির আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহযোগিতা করে। এই ফলের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম। বাঙ্গি মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে শরীরের অবসাদ ভাব দূর করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারি বাঙ্গি। চাষি তমাল দাশ বলেন, আমাদের এখানে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ হচ্ছে। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বাঙ্গি বিক্রি হয়। মাঘ মাস থেকে আমরা এখানে চাষ শুরু করি। প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হয়েছে এ বছর তাই আশা করছি ৮০ থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। এ বছর বাঙ্গি চাষ করে আমরা সফল হব। আরেক চাষি সুব্রত হালদার বলেন, বহুদিন ধরে এখানে বাঙ্গির চাষ হয়। এগুলো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপারিদের সহযোগিতায় আমরা বিক্রি করি। বিভিন্নস্থান থেকে তারা এসে কিনে নিয়ে যায়। আমরা এখানে কাজ করতে পরিবারসহ চলে আসি। শুধু খাবারের বিরতি ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা আমাদের এই মাঠেই কাজকর্মে কাটে। যাতায়াত সমস্যায় আমরা বাঙ্গির দাম ঠিকমতো পাই না।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। ট্রলার থেকে ভ্যানে, ভ্যান থেকে ট্রাকে ৩-৪ বার করে এগুলো তুলতে হয় আমাদের। যাতায়াতের জায়গাটা ভালো হলে আমাদের খরচটা একটু বেঁচে যেত। এই কারণে খেত মালিককে যে টাকা দেওয়া দরকার আমরা সেটা ঠিকমতো দিতে পারছি না। আমাদেরও বেশি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে পরিবহন সমস্যার কারণে। এখানে যে বাঙ্গি চাষ হয় তা দেখতেও ভালো, খেতেও ভালো, আর পরিমাণেও অনেক বড় হয়। এখানে কোনো প্রকার ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই ভালো ফলন হয়। সারাদেশে পিরোজপুরের বাঙ্গির ভালো চাহিদা রয়েছে।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, এ বছর জেলায় মোট ১২৬ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। এই বাঙ্গি চাষে পরিপূর্ণ ফলাফল পেতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। অল্প জমিতে অল্প সময়ে এই ফলের মাধ্যমে কৃষক লাভবান হবেন বলে আশা আমাদের। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এই জেলার বাঙ্গি আকারে বড় এবং খেতেও সুস্বাদু হয়। কৃষকরা সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষ করায় বাঙ্গিতে সহজে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। ঢাকা-চট্টগ্রাম-খুলনাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এই বাঙ্গি সরবরাহ হয়ে থাকে। যাতায়াত ব্যবস্থায় সমস্যা থাকার কারণে কৃষকরা দাম একটু কম পেয়ে থাকেন। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও একটু উন্নত করতে পারলে কৃষক ফলন বৃদ্ধির মাধ্যমে বেশি লাভবান হবেন বলে আশা আমাদের।
আকাশজমিন/আরজে