আকাশজমিন ডেস্ক
সম্প্রতি দেশে মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলসহ ও র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। লঙ্ঘন বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন সুলতানা জেসমিন। র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধগুলো এখন বিশ্ববাসী জানে এবং একটি পশ্চিমা দেশ এই সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান কর্তাব্যক্তিদের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরপরও র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা থেমে থাকছে না। নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে নিপীড়ন চলছেই। নিপীড়নমূলক কার্যক্রমে পিছিয়ে নেই আইনপ্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থাও। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিষয়ে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনকে ঘিরে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকধারী পুলিশেরা ধরে নিয়ে গেছে প্রতিবেদককে। কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে, পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে। একই আইনে মামলা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিককেও। এই আইন যখন প্রবর্তন করা হয় এবং পরেও সরকারের মুখপাত্ররা বারবার বলেছে, যে এটি সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু এটি সবচেয়ে বেশি যে পেশার মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম। বিবৃতিতে বলা হয়, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী এবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে ৫৬ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছে। বৈশ্বিক প্রেস ফ্রিডম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর সূচকে অবস্থান কেবলই পিছিয়েছে, কখনো এগোয়নি।
পেশাগত সংগঠনের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নিপীড়নমূলক যন্ত্রাদির পাশাপাশি সরকার প্রপাগান্ডা মেশিনের অনুষঙ্গগুলোও বরাবরের মতো ব্যবহার করছে। বিশেষত যখন সরকার কিছুটা বিপদে পড়ে, তখন শিক্ষক, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবী সমিতি ও সংগঠনগুলো মাঠে নামে পূর্ণ আনুগত্যের সমর্থন নিয়ে। তাদের আনুগত্যের বহর দেখে জনমানসে ওই পেশায় অধিষ্ঠিত সবার ব্যাপারে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। যেমন একজনের মন্তব্য ও আরেকজনের ছবি দিয়ে যে ফটোকার্ড ছেপেছিল প্রথম আলো, তা সাংবাদিকতার মান ও চর্চা অনুসারে ভুল না হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ পাঠকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বিবেচনায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ফটোকার্ড সরিয়ে নেয় এবং সংশোধিত রিপোর্ট ছাপে। বিক্ষুব্ধ পক্ষ প্রেস কাউন্সিলে না গিয়ে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, তা চরম অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মানসিকতারেই বহিঃপ্রকাশ। এরপর এডিটর গিল্ডস, সম্পাদক ফোরাম ইত্যাদি সাংবাদিকদের সংগঠন সরকারের নিবর্তনকে চিহ্নিত না করে, পত্রিকাকেই দায়ী করে।‘একটি টিভি চ্যানেল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নামে পুরো ঘটনাকে বিকৃত করে নতুন করে রিপোর্ট করে, যাকে সাক্ষী মানা হয় মামলার এজাহারে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের এরকম পদক্ষেপ বিরল এক ঘটনা, আমরা এর নিন্দা জানাই।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিবৃতির নিন্দা করে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিবৃতিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে বেআইনীভাবে একজন সাংবাদিককে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ না করে সরকারের এই কাণ্ডের পক্ষে নির্জলা তোষামোদী বক্তব্য হাজির করেছে। যা আমাদের চরমভাবে লজ্জিত এবং মর্মাহত করেছে! শিক্ষকদের অধিকার আদায় ও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হলেও, শিক্ষকদের দাবিদাওয়ায় তাদের মনোযোগ নেই। কোনো শিক্ষক কোনো হুমকি বা নিপীড়নের শিকার হলেও এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কোন সক্রিয়তা দেখা যায় না। ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতন একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নিয়েছে। কিন্তু সেবিষয়েও শিক্ষক সমিতির কোনো বক্তব্য নেই। শিক্ষক সমিতি কিছু শিক্ষকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গঠনের একটা মাধ্যমে পর্যবসিত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে তারা নিজের রাজনৈতিক এবং পেশাগত উচ্চাশা পূরণের পথ সুগম করতে চেষ্টা করেন। বিনিময়ে তারা সমাজের কাছে পুরো শিক্ষকতা পেশার মান-মর্যাদাকে ধুলোয় লুটিয়ে দিতে কার্পণ্য করছেন না।
বিবৃতিতে যে দাবিগুলো করা হয়, তা হলো- প্রথম আলো ও যুগান্তরের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী র্যাব সদস্যদের কেবল ’ক্লোজ‘ করার মতো মৃদু শাস্তি না দিয়ে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
আকাশজমিন/আরজে