সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ পূর্বাহ্ন

নলছিটিতে ৪২ শিক্ষার্থীর জন্য ৭৫ স্কুল!

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ১:১৩ pm

ঝালকাঠি সংবাদদাতা
ঝালকাঠির নলছিটিতে করোনায় ঝরে পড়া ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৭৫টি স্কুল তৈরি করা হয়েছে। খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘ঝরে পড়া শিক্ষার্থী নলছিটি উপজেলায় নেই বললেই চলে। খোঁজাখুঁজির পর ৪২ জন পাওয়া যায়। এখানে ৭৫টি স্কুল স্থাপনের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।’ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে করোনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৭৫টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে ঝরে পড়া ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকবে। তারা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী হতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের বয়স হবে আট থেকে ১৪ বছর। শিক্ষার্থীদের মাসিক ১২০ টাকা ভাতা, বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক, পোশাক, স্কুলব্যাগ, ভালো মানের শ্রেণিকক্ষ, যাবতীয় মালপত্র ও বৈদ্যুতিক ফ্যান কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বেসরকারি সংস্থা ভোসড। বাস্তবে কেন্দ্রগুলোতে এর অনেক কিছুর অস্তিত্ব নেই।
সম্প্রতি রাজপাশায় গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্র চলছে ভাঙা পরিত্যক্ত মাঝিবাড়ির কাছারিঘরে। জয়কলস শিক্ষা কেন্দ্রে বিকেল ৩টায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। মালোয়ার কেন্দ্রে গিয়ে মাদুর বিছানো খালি কক্ষে কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। এ কেন্দ্রের শিক্ষিকা মারুফা আক্তারের এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এর পরিবর্তে তাঁর চাচি পাখি বেগম প্রক্সি দিচ্ছেন। দেওপাশা কেন্দ্রের শিক্ষিকাকে উপস্থিত পাওয়া গেলেও কোনো শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে ছাত্র মেহেদী হাছানকে (১৩) পাওয়া যায়। সে জানায়, স্থানীয় চন্দ্রকান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। একটি কেন্দ্রের সুপারভাইজার নাছরিন সুলতানা উপজেলা প্রগ্রাম ম্যানেজারের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে বরিশাল শহরে থাকেন। মালোয়ার কেন্দ্রের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি নিয়মিত কেন্দ্র চালাই। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম রয়েছে। সুপারভাইজার দু-এক মাস পর কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। সিদ্ধকাঠি ও দপদপিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার নাছরিন সুলতানা কোথায় আছেন জানতে চাইলে মুঠোফোনে বলেন, কেন্দ্র ভিজিটে মাঠে আছেন। কোনো কেন্দ্রে আছেন জানতে চাইলে সংযোগ কেটে দেন। এ ছাড়া মোল্লারহাট ইউনিয়নের ৯টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে সিকদারহাট, আমতলী, মধ্যকাটাখালি, রাজাবাড়িয়া, পূর্বকামদেবপুর কেন্দ্র ঘুরে বন্ধ পাওয়া গেছে। মালুহার কেন্দ্রে ছয়জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও তারা পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় পড়ে। উপবৃত্তির টাকা কেউ পায়নি। ভোসড নলছিটি অফিসের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সরেজমিনে সুবিদপুর, কুশঙ্গল, নাচনমহল, রানাপাশা, মগর, ভৈরবপাশা ও দপদপিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ শিক্ষাকেন্দ্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসব কেন্দ্রের শিক্ষকের মাসিক বেতন পাঁচ হাজার, পাঁচজন সুপারভাইজারের বেতন ১৫ হাজার, কেন্দ্রভাড়া এক হাজার ৫০০, প্রগ্রাম ম্যানেজারের বেতন ১৫ হাজার টাকা করে। সিকদারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরিন সুলতানা জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে উপানুষ্ঠানিক কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক নলছিটি উপজেলা সভাপতি খলিলুর রহমান মৃধা বলেন, ‘প্রশাসন নজরদারি রাখলে এসব স্কুল ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে টাকা তুলতে পারবে না।’উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রের উপজেলা প্রগ্রাম ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘বেশিসংখ্যক কেন্দ্র ভালো চলছে। কয়েকটি একটু খারাপ আছে, সেগুলো ঠিক করতে কাজ করছি।’উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা নাহিদ বলেন, ‘অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক শেখ মো. সুরুজ্জামান বলেন, ‘তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আকাশজমিন/আরজে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD