রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

এখনো পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৮ যুদ্ধাপরাধী

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:৪০ am

আকাশজমিন প্রতিবেদক: ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের। সেই সময় থেকে ১০ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন একাত্তরের এই মানবতাবিরোধী অপরাধী।

আবুল কালাম আযাদ ছাড়াও একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চরম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৭ যুদ্ধাপরাধী এখনো পলাতক। যাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৭ জন, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জন এবং ২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন রয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনজন বিদেশে পালিয়ে আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম সদস্য বদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মইনুদ্দিন এবং ফরিদপুরের জাহিদুর রহমান ওরফে খোকন রাজাকার। তাদের গ্রেফতরের জন্য খুঁজছে পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যালে ৪৪ মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১০৬। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে ৯৬ জনের। পলাতক দণ্ডিত ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তাদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে (রিভিউ) জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন। এ ছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সানাউল হক বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত থেকে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ২৭ আসামি এখনো পলাতক, তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই তাদের দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব। কারণ ট্রাইব্যুনালে এসব আসামির বিরুদ্ধে যে রায় এসেছে, তার বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়নি। গ্রেপ্তার হলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে কারোর জন্য আর আপিলের সুযোগ নেই। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ¶েত্রেও আপিল করার সুযোগ নেই। তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে। তবে যে কারো রাষ্ট্রপতির কাছে ¶মা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তদন্ত পর্যায়ে পালিয়ে রয়েছেন দেড় শতাধিক আসামি। তাদের অনেকের সন্ধান এখনো মেলেনি। এমন প্রে¶াপটে বেশ কয়েকজন পলাতক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শেষ হয়। পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তারে ২০১৫ সালের ১৩ মে ট্রাইব্যুনাল স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেন। আদেশটি হলো, ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পলাতক সব আসামিকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ১৫ দিনের মধ্যে একটি মনিটরিং সেল গঠন, সেই সঙ্গে ৪০ দিন পরপর এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে উচ্চ¶মতাসম্পন্ন এই মনিটরিং সেল গঠিত হলেও গত আট বছরে দৃশ্যত কোনো ফল নেই। ইতোমধ্যে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে বেশ কয়েকবার প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে পুলিশ।

করোনা মহামারির আগে এই সেলটির বছরে দু-একটি বৈঠক হলেও দুই বছর ধরে কোনো বৈঠক হয়নি। অন্যদিকে আসামিদের গ্রেপ্তারে গত বছর তাদের ঠিকানা অনুযায়ী ৩০ জেলা ও থানায় ছবিসহ তদন্ত সংস্থা থেকে চিঠি পাঠানো হয়। একই সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কারের ঘোষণাও দেয়া হয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
পলাতক আসামিদের এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তারপরও বলব, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। বিদেশে পলাতক চারজনকে দেশে ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন ও পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি তাদেরও ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা যাবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বছর দুই আগেও ৫৬ জন আসামি পলাতক ছিলেন। বর্তমানে ৩৮ জন। এ থেকে বোঝা যায় সরকার যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তারে কতটা সচেষ্ট। আশা করি বাকি পলাতকদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা যাবে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের পর পলাতক আছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাচিরা গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মধ্যপাড়ার নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির, একই উপজেলার হাইধনখালীর আযহারুল ইসলাম, জামালপুরের মিয়াপাড়ার আশরাফ হোসেন, একই জেলার কাচারিপাড়ার অধ্যাপক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, বগাবাইদ গ্রামের আব্দুল বারী, হারুন ও আবুল হাশেম।

পলাতক অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যশোরের কেশবপুরের আব্দুল আজিজ সরদার, আব্দুল খালেক মোড়ল, শরীয়তপুরের ইদ্রিস আলী সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ হুসাইন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের আবু ছালেহ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, রুহুল আমিন, আব্দুর রহিম, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, মৌলভীবাজারের রাজনগরের মোবারক মিয়া, ঢাকার সাভারের আবুল কালাম, আব্দুন নুর তালুকদার ওরফে লাল, হবিগঞ্জের লাখাইয়ের লিয়াকত আলী, নেত্রকোণার পূর্বধলার শেখ মো. আব্দুল মজিদ, আব্দুল খালেক তালুকদার, কবির খান, আব্দুস ছালাম বেগ।

বিদেশে পলাতক আছেন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে, আশ্রাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে, চৌধুরী মঈন উদ্দিন যুক্তরাজ্যে এবং জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকার সুইডেনে।

 

আকাশজমিন/এসআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD