আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো কোনও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থ প্রদানের মতো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হলেও ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া একমাত্র বিশ্বনেতা ট্রাম্প নন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এমন কয়েকজন সাবেক নেতার তালিকা তুলে ধরা হয়েছে।
আর্জেন্টিনাঃ
ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কার্চনার: ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় একটি প্রতারণার মামলায় ২০২২ সালে দোষী সাব্যস্ত হন। তখন তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মামলার রায়ে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং রাজনৈতিক পদে থাকার ক্ষেত্রে আজীবন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন।
ব্রাজিলঃ
লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা: ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতা ছিলেন। ২০১৭ সালে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। ২০২১ সালে তিনি খালাস পান।
ক্রোয়েশিয়াঃ
ইভো সানাদার: ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। রায়ে তার আট বছরের কারাদণ্ড হয়। বর্তমানে তিনি সাজা ভোগ করছেন।
ফ্রান্সঃ
জ্যাক শিরাক: ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০১১ সালে দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে দুই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্যারিসের মেয়র থাকাকালীন প্রভাব বিস্তার, বিশ্বাস ভঙ্গ ও আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান।
নিকোলাস সারকোজি: ২০২১ সালে দ্বিতীয় সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুর্নীতি ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে দুই বছরের সাজা স্থগিত করা হয়।
জার্মানিঃ
ক্রিশ্চিয়ান উলফ: ২০১৩ সালে জার্মানির সাবেক প্রেসিডেন্ট সুবিধা গ্রহণ ও প্রদানের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের রায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি।
ইসরায়েলঃ
মোশে কাটসাভ: সাবেক ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে ২০১১ সালে অধস্তনদের ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন অপরাধের জন্য সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি মাত্র পাঁচ বছরের বেশি কারাগারে ছিলেন।
এহুদ ওলমার্ট: সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে ২০১৫ সালে জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ এবং কর ফাঁকির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। পরের বছর তাকে সাজা দেওয়া হয়। তিনি ২৭ মাসের কারাদণ্ডের দুই-তৃতীয়াংশ ভোগ করেছেন।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু: ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবার তার ষষ্ঠ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ এবং দুর্নীতির অভিযোগের বিচার চলমান। দীর্ঘদিন ধরে চলমান মামলায় ২০১৯ সালে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে কোটিপতি বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ এবং অনুকূল কাভারেজের বিনিময়ে মিডিয়া টাইকুনদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ইতালিঃ
সিলভিও বারলুসকোনি: ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে তিনটি ঘুষের অভিযোগের বিচারে খালাস পেয়েছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালেও একটি মামলায় খালাস পান। ১৯৯৪ সালে রাজনীতিতে প্রবেশের পর বারলুসকোনি ৩০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।
মালয়েশিয়াঃ
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন: মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সরকারি চুক্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
নাজিব রাজাক: মালয়েশিয়ার আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ১২ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ২০২২ সালে দুর্নীতির মামলায় আপিলে হেরে যাওয়ার পর তার কারাদণ্ড শুরু হয়। ২০২০ সালে অপরাধমূলক বিশ্বাস লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ওয়ানএমডিবিরাষ্ট্রীয় উন্নয়ন তহবিলের লুটপাটের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থপাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
দক্ষিণ আফ্রিকাঃ
জ্যাকব জুমা: দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট চলমান দুর্নীতির বিচারে জড়িত। ১৯৯৯ সালে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন অর্থ পাচার এবং বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত হন।
দক্ষিণ কোরিয়াঃ
লি মিউং-বাক: দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্রপতিকে ঘুষ ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০২০ সালে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে তাকে ক্ষমা করা হয়েছিল।
পার্ক গিউন-হাই: দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ২০১৮ সালে ঘুষ এবং জবরদস্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে তিনি ক্ষমা পান।
পাকিস্তানঃ
ইমরান খান: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্তত ৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, আদালত অবমাননা, দাঙ্গা এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগ রয়েছে।
পর্তুগালঃ
হোসে সক্রেটিস: ২০১৭ সালে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ঘুষ, অর্থপাচার ও কর ফাঁকিসহ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০২১ সালে একজন বিচার তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দেন। তবে কম গুরুতর অভিযোগগুলো বহাল রাখেন।
আকাশজমিন/আরজে