আকাশজমিন ডেস্ক
বুধবার মধ্যরাতে ট্রেনে চেপে শিলিগুড়ি পৌঁছন অরিজিৎ সিংহ। সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই অনুরাগীদের প্রশংসায় ভাসছেন গায়ক।
গত মঙ্গলবার সকালেই ছড়িয়ে পড়ে ভিডিয়ো। তার পর থেকেই চর্চায় অরিজিৎ সিংহের ট্রেন সফর। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অরিজিৎ কনসার্ট করবেন। এই প্রথম উত্তরবঙ্গে কনসার্ট করছেন শিল্পী। তাই তাঁর অনুষ্ঠান ঘিরে আলাদা আবেগে ভাসছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ।এ দিকে শিলিগুড়ি পৌঁছতে সাধারণ পথ বেছে অনুরাগীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অরিজিৎ। কোনও হেলিকপ্টার বা নিদেনপক্ষে বিমানসফরও নয়, জিয়াগঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছতে অরিজিতের বাহন ছিল ট্রেন! বুধবার রাত ২.৩০ নাগাদ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ঢোকে। প্ল্যাটফর্মে তখন অগুনতি ভক্ত অপেক্ষমাণ। প্রত্যেকের হাতেই মোবাইলের ক্যামেরা খোলা। প্রিয় তারকাকে এক ঝলক দেখার জন্য আকুতি ধরা পড়ছে তাঁদের চোখে। অবশেষে কামরার দরজায় এসে দাঁড়ালেন অরিজিৎ। পরনে জলপাইরঙা হুডি, মাথা ঢাকা তাতে। মুখে মাস্ক। নিজেকে প্রায় আড়ালে রেখেছেন তিনি।সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, প্ল্যাটফর্মে নেমে মাথা থেকে হুডি খুলে ফেলেন অরিজিৎ। নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে শিল্পীকে স্টেশনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর তিনি নির্ধারিত গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরই সঙ্গে আরও একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। সম্ভবত সেই ভিডিয়োটি জিয়াগঞ্জ স্টেশনে তোলা হয়েছে। সেখানে অবশ্য অরিজিতের মুখে মাস্ক নেই। মাথায় সবুজ রঙের পাগড়ি। পরিচিত হাসিমুখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন শিল্পী।
অরিজিতের উত্তবঙ্গ সফরের এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অনুরাগীরা সমাজমাধ্যমে শিল্পীর প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে অরিজিতের সহজ-সরল জীবনযাপনের কথা। এক জন অনুরাগী লিখেছেন, ‘‘সাধারণ জীবনযাপনের সেরা উদাহরণ।’’ কেউ লিখেছেন, ‘‘আজ থেকে একশো বছর পরেও মানুষ অরিজিৎকে শুধুমাত্র তাঁর গানের জন্য নয়, তাঁকে এক জন সহজ-সরল মানুষ হিসেবেও মনে রাখবেন।’’
তবে এই প্রথম নয়, অরিজিতের জীবনযাত্রায় সারল্যের ছাপ এর আগেও বেশ কয়েক বার ধরা পড়েছে। অরিজিৎ জিয়াগঞ্জে বড় হয়েছেন। সেখানে মাঝেমধ্যেই তাঁকে সাইকেল চালাতে দেখা যায়। সেখানে নিজের বাচ্চাদের স্কুল থেকে নিতে গিয়েও সাধারণের মধ্যেই সকলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন অরিজিৎ। কোনও গাড়ি নয়, স্কুটিতে সওয়ার হয়ে তিনি ভোট দিতে আসেন। তবে এই জীবনযাপন শুধু জিয়াগঞ্জে নয়, মুম্বইয়েও। যে এলাকায় যে আবাসনে অরিজিতের ফ্ল্যাট এবং মুম্বইয়ের অফিস, তা এত নামী সঙ্গীতশিল্পীর বাসস্থান হিসাবে অনেকেই কল্পনা করতে পারেন না। আবাসনের পিছনে রয়েছে একটি সব্জি বাজার। সেখানে অনেক সময়ই অরিজিৎকে দেখা যেত তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বাজার করতে। সেখানেও তাঁর বাহন স্কুটি। এমনও শোনা যায় যে, স্কুটি তাঁর বড়ই প্রিয়। গাড়ি তিনি কিনতেই চাননি। কিন্তু পরে একটি ছোট গা়ড়ি কিনেছিলেন সপরিবারে যাতায়াত করার জন্য। তবে তাঁর ম্যানেজারের চাপে পড়েই খানিক বড় গাড়ি কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন পরে। ম্যানেজার তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, অরি়জিৎ সিংহের মতো শিল্পী এই ছোট গাড়ি থেকে নামলে সঙ্গীত পরিচালকরা খুব বেশি পাত্তা দেবেন না। অরিজিৎ অবশ্যই এ সবের চেয়ে নিজেকে দূরে রাখতেই পছন্দ করেন। তাই বার বার মুম্বই ছেড়ে নিজের শহর জিয়াগঞ্জে ছুটে যান।
এখন বছরের প্রায় অনেকটা সময়ই অরিজিৎ জিয়াগঞ্জে কাটান। গত বছর করোনায় শিল্পীর মা প্রয়াত হন। সূত্রের খবর, মায়ের প্রয়াণের পর থেকে সময় পেলেই বাবার সঙ্গে থাকতে চান অরিজিৎ। তাই বার বার তাঁর মুম্বই থেকে জিয়াগঞ্জে ফিরে আসা। সমাজমাধ্যমেও তিনি নিজের গতিবিধি জাহির করতে বিশেষ একটা পছন্দ করেন না। যেটুকু করেন, তা নেহাতই নিজের কাজের প্রচারের স্বার্থে। মহাতারকা হওয়া সত্ত্বেও নিজের শিকড়কে যে কখনও ভুলতে নেই, অরিজিৎ সিংহ তার অন্যতম উদাহারণ।
আকাশজমিন/আরজে