আকাশজমিন ডেস্ক
রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের কসত্রোমা শহর। ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনারা কতটা ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তার পরিষ্কার একটি ধারণা পাওয়া যাবে শহরটির দিকে তাকালে। কারণ, শহরটিতে রুশ সেনাবাহিনীর একটি সেনা দলের ঘাঁটি রয়েছে, নাম ৩৩১তম গার্ডস প্যারাসুট রেজিমেন্ট।
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর এই রেজিমেন্টের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে রাশিয়ার নানা যুদ্ধে সম্মুখসারিতে থেকে অংশ নিয়েছে এই রেজিমেন্ট। বাদ পড়েনি ইউক্রেনও। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে যুদ্ধ শুরু থেকেই সেখানে লড়ছেন এই রেজিমেন্টের সেনারা। এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তাঁদের ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরপরই রেজিমেন্টটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে বিবিসির নিউজনাইট। সেখানে রেজিমেন্টের সেনাদের নিহত হওয়ার এ তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধান চালাতে ফেসবুকের মতো রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ভি কন্টাক্টে’ ঘেঁটে দেখা হয়। তথ্য নেওয়া হয় স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে। এ ছাড়া সাহায্য নেওয়া হয় স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি ও গুগল স্ট্রিট ভিউ ছবির।অনুসন্ধানের একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ভি কন্টাক্টে প্রকাশিত একটি ভিডিও বিবিসির নজরে এসেছিল। সেখানে কসত্রোমা শহরের একটি কবরস্থানে কয়েকজন সেনার কবরের চিত্র ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিওর ওই কবরগুলোতে লেখা নাম এবং বিবিসির হাতে আসা ৩৩১তম গার্ডস প্যারাসুট রেজিমেন্টের নিহত সেনাদের নামে মিল পাওয়া গেছে।
তবে বিবিসির অনুসন্ধানে যেমনটা দেখা গেছে, নিহত সেনাদের প্রকৃত সংখ্যাটা হয়তো আরও বেশি। কারণ, রেজিমেন্টের সেনাদের একাংশের বাড়ি কসত্রোমা শহরের বাইরের। ফলে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা বেশ কঠিন। আর রেজিমেন্টের বেশ কিছু সেনা সম্পর্কে খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁদের মধ্যে অল্প কয়েকজনই হয়তো নিহত সেনাদের তালিকায় রয়েছেন।
আরেকটি বিষয় হলো, নিহত সেনাদের বাইরে রেজিমেন্টের অনেক সেনা আহত হয়েছেন। অনেকে আবার ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে আটক। সব মিলিয়ে এককালে সুখ্যাতি কুড়ানো এই রেজিমেন্ট ইউক্রেন যুদ্ধে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কসত্রোমার স্থানীয় একটি ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আশির দশকে আফগানিস্তান যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন এই রেজিমেন্টের সেনারা। তবে ৯ বছর ধরে চলা ওই যুদ্ধে রেজিমেন্টের মাত্র ৫৬ জন সেনা নিহত হয়েছিলেন।গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় ৩৩১তম গার্ডস প্যারাসুট রেজিমেন্টে সেনা সংখ্যা ছিল দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০। এর মধ্য থেকে দুই ব্যাটালিয়ন অর্থাৎ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ সেনা ইউক্রেনে মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে যুদ্ধের শুরুর দিকে রাজধানী কিয়েভ দখল করতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন তাঁরা। ফলে ইউক্রেন থেকে এই সেনাদের ফিরিয়ে আনা হয় এবং রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর বেলগ্রোদে রেজিমেন্টটি আবার নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর রেজিমেন্টের সেনাদের ইউক্রেনের খারকিভের ইজিয়াম শহর ও খেরসনে দেখা গেছে। বর্তমানে তাঁরা দনবাসে যুদ্ধ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভি কন্টাক্টে নানা পোস্টে সেনাদের মৃত্যুর তারিখ থেকে এই রেজিমেন্ট ইউক্রেনে কোন কোন সময় বা কোথায় যুদ্ধ করেছে, তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। যেমন গত ফেব্রুয়ারিতে ভি কন্টাক্টেতে এই সেনাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর এটাই ইঙ্গিত দেয় যে তাঁরা ইউক্রেনের ক্রেমিনা শহরে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
আকাশজমিন/আরজে