সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

লালমনিরহাট তিস্তার পানি, বিপৎসীমার ওপরে আতঙ্কে নদী পাড়ের মানুষ

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:১৬ pm

 

লালমনিরহাট সংবাদদাতা :
পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
এদিকে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও ঝুঁকিতে পড়েছে।
বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদীপাড়ের হাজারও মানুষ।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার।
যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে শনিবার দুপুর থেকে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়।
ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বামতীরের জেলা লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানায়, ভারতের সিকিমে উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি একক ব্যবহার করছে ভারত সরকার।
উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে। টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। এতে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোরে। উৎতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার রশিদুল হক বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রিজ অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এসময় বাঁধ কাঁপছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই রাত থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। আমাদের গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। নৌকা দিয়ে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির যোগাযোগ করতে হচ্ছে। ডুবে থাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। আমন ক্ষেত ডুবেছে বন্যায়। বেশি সময় এমন থাকলে ধান গাছ নষ্ট হতে পারে।

একই গ্রামের আব্দুর রশিদ ছোট বলেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে হাঁটু পানি। বাচ্চা বৃদ্ধদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে পড়েছি। শুকনো খাবার প্রয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত আসেনি। এবারের বন্যায় তেমন কেউ খবর নিতেও আসেনি।
হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বিছনদই গ্রামের তমিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামে আড়াই/তিন শত পরিবারের বসবাস। সবাই শুক্রবার রাত থেকে পানিবন্দি। দিন যত যাচ্ছে পানিবন্দির সংখ্যা তত বাড়ছে। বন্যার সময় শিশু বৃদ্ধ আর গবাদি পশুপাখি নিয়ে বড় বিপদে পড়তে হয়। বন্যা হলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তিস্তাপাড়ের মানুষদের। আমরা ত্রাণ নয়, চাই তিস্তার মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন/সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেওয়া হবে।
মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের তিন হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয়। সেটা নজরদারি করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলা করতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

আকাশজমিন/এম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD