লালমনিরহাট সংবাদদাতা।।
ঢাকা লালবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে দেশের সুদূর উত্তরের জেলা লালমনিরহাট ও কালীগঞ্জে ৭৩ জনকে। আসামিদের ৩ জন লালমনিরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য। ১ জনের স্থানীয় ঠিকানা ঢাকার হলেও ৭৩ জনের কেউই মামলার এলাকার বাসিন্দা নন। অনুসন্ধানে ধারণা পাওয়া যায়, এলাকার রাজনৈতিক বিরোধ ও ব্যক্তিগত শত্রুতাকে কেন্দ্র করে তাঁদের আসামি করা হয়েছে।
নাম বাদ দিতে বিএনপিম এক নেতা এক আসামির কাছে টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট ঢাকা লালবাগ এলাকায় বিক্ষোভের সময় নিহত হন শাহীনুর (১৯)। এই ঘটনায় তাঁর ভাই মো. মাজেদুল ইসলাম ২৭শে আগস্ট লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে মামলায় নাম উল্লেখ করা সব আসামিই কালীগঞ্জ ও লালমনিরহাটের।
মামলার বাদী মো.মাজেদুল ইসলাম (২৫)এ বিষয়ে বলেন, ‘আসামিদের কয়েকজন সংসদ সদস্য। অন্যরাও কোনো না কোনোভাবে ঢাকায় সেটেল্ড (স্থায়ীভাবে বাস করেন)। আমি বলি না তারা আসলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তারা সংঘবদ্ধ হয়ে এই কাজটা করে থাকতে পারে, এ রকম সম্ভাবনা থেকেই মামলাটা করেছি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মোতাহের হোসেন, লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুজ্জামান আহমেদ ও লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মতিয়ার রহমানসহ মোট ৭৩ জনের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে শুধু সংসদ সদস্য মো. মোতাহের হোসেনের বর্তমান ঠিকানা ঢাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা বাকি সব আসামির বাড়ি লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলায়। তাঁদের আর একজনেরও বর্তমান ঠিকানা ঢাকায় নয়। সবার ঠিকানাই লালমনিরহাট ও কালীগঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে যোগ দেন শাহীনুর ইসলাম। তখন লালবাগে মিছিলে যোগ দেয় থানার সামনে আগ্নেয়াস্ত্র, লোহার রড, বাঁশ, হকিস্টিকসহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা শাহীনুর ইসলাম কে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট শাহীনুর ইসলাম ভোর ৫:৩০মিনিটে মারা যান।
নিহত ভাই মাজেদুল ইসলাম সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বাড়ি লালমনিরহাটের মোঃ মৃত শাহিনুর (১৯) পিতাঃ আব্দুল জব্বার, গ্রামঃ বড়বাসুরিয়া, পোঃ খেদাবাগ, থানাঃ লালমনিরহাট গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। ভাইয়ের হত্যার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের আসামি করেছি, তাদের বিরুদ্ধে আমার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। পুলিশ যখন তদন্ত করবে তখন তাদের বাইরে যদি অন্য কেউ থাকে বা তারা না থাকে, তাতে আমার আপত্তি নেই। আমি সুবিচারের স্বার্থে মামলাটা করেছি।
মামলার এজাহারের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার (ওসি)শাহআলম সরদার বলেন, ‘সব আসামি কালীগঞ্জ ও লালমনিরহাটের, এ বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু বলতে পারব না। তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মামলার এজাহার ঘেঁটে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসামিদের অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। এলাকায় রাজনৈতিক বৈরিতা ও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে তাঁদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার অধিকাংশ আসামি আত্মগোপনে রয়েছেন। এক আসামি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম মামলায় জড়িয়েছে। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন। অথচ তাঁকে ঢাকার লালবাগ ও রংপুর থানার হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আকাশজমিন/আরআর