বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

পাহাড়জুড়ে নতুন আতঙ্ক কেএনএফ

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ৬:২৩ am

আকাশজমিন ডেস্কঃ
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, কেএনএফের কাছ থেকে তিন দফায় অস্ত্র কেনেন নতুন আনসার শারক্বীয়ার শীর্ষ নেতারা। তাঁরা নানা ধরনের ৫৫-৬০টি অস্ত্র কিনেছেন। এ ছাড়া তাঁরা একে-৪৭ রাইফেলের গুলিও সংগ্রহ করেছেন। কেএনএফের কাছে একাধিক একে-৪৭ রাইফেল রয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক দফায় পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জামাতুল শারক্বীয়ার দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান, কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের সময় অস্ত্র চালানো ছাড়াও বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল শেখানো হতো। শারীরিকভাবে ফিট থাকতে অনেকে শিখতেন কারাতে। কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক বিবৃতিতে জানায়, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমান বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে তাঁরা ফিরে এসে আত্মগোপনে যান। রুমা উপজেলার এডেনপাড়ার নাথান বম এই সংগঠনের প্রধান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পড়াশোনা করেছেন। কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি বেসরকারি সংগঠন প্রতিষ্ঠাতা করেন তিনি। নাথান এখন আত্মগোপনে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কেএনএফ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের পর রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছগি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে। কেএনএফেরই একটি অংশ হলো কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএ।
পাহাড়ে সক্রিয় সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তবে তারা এখন খুনোখুনি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে বারবার আলোচনায় আসছে। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি এই সংগঠন গড়ে তোলেন। বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল অঞ্চলে বমদের বসবাস। গত শুক্রবার রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়া এলাকায় গোলাগুলিতে আটজন নিহত হওয়ার পর নতুন করে কেএনএফের নাম সামনে এলো। র্যাব শুরু থেকে বলছে, কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়া ৫৫ জন তরুণ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জড়িত। আর তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে কেএনএফ।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও কেএনএফ সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলিতে ওই আটজন মারা যান। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপর একটি সূত্রের ভাষ্য, বম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকে নিরীহ। পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অপারেশন চলার সময় বমদের কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করেছেন। প্রশাসনকে সহায়তাকারীকে শায়েস্তা করতে কেএনএফও সাধারণ বমদের টার্গেট করতে পারে। তবে কেএনএফের নানামুখী তৎপরতা ঘিরে বান্দরবানে আরও অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, পাহাড়ের এই সংঘাতের কারণ কেএনএফের সঙ্গে অন্য সশস্ত্র সংগঠনের আধিপত্যের লড়াই। যারা যত বেশি জায়গা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে তত বেশি চাঁদার ভাগ পাবে তারা। কেএনএফ পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। জঙ্গিদের সঙ্গেও তাদের আঁতাত রয়েছে। খুব অল্পসংখ্যক নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী কেএনএফ যাতে পাহাড়ে কোনোভাবে সুসংহত অবস্থান তৈরি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি জঙ্গিদের প্রশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে কেএনএফ। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের ওপর হামলা করেছে। পার্বত্য এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অপহরণও করা হয়েছে। কেএনএফ রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে চলছে। এসব ঘটনায় জড়িত কেএনএফ সদস্যদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা বলছেন, দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিল জামাতুল শারক্বীয়া। পাহাড়ি এই সশস্ত্র সংগঠনটি টাকার বিনিময়ে জামাতুল আনসারকে প্রশিক্ষণ দেয়। তবে কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় পোস্ট দিয়ে দাবি করে, বম জাতিগোষ্ঠীর একটা অংশের উদ্যোগে এটি গঠিত হলেও তারা বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি এই ছয় জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে।
আকাশজমিন/আরজে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD