কুমিল্লা সংবাদদাতাঃ
চলতি মৌসুমে জেলার তিতাস উপজেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠে লাল টুকটুকে পাকা মরিচ তোলা ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার নারী-পুরুষসহ শিশুরাও। নদীবেষ্টিত এ উপজেলায় এখন চলছে মরিচ তোলার মৌসুম। মরিচ এখানকার মানুষের প্রধান ফসল। পাশাপাশি ভালো বাজার মূল্য এবার মরিচ চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। প্রথমে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে এখন মৌসুম শেষে লাল রঙা পাকা মরিচ শুকানো হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ মরিচ চাষ এর নির্দিষ্ট এলাকায় এখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শুকনো মরিচের গন্ধ। দিন-রাত মরিচ নিয়ে কাজ করার পরেও মরিচ চাষিদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। তিতাসের মাঠে-মাঠে এখন যত দূর চোখ যায় শুধু মরিচ, আর মরিচ। টিনের চালে, বাড়ির ওঠানে, বিদ্যালয়ের ছাদে এমনকি ফসলি জমিতে লাল টুকটুকে মরিচের পসরা সাজিয়ে রেখেছে মরিচ চাষিরা।
কুমিল্লা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিতাসের চরাঞ্চলে এবার মরিচের উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে কয়েক হাজার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি এবার নিজদের ভাগ্যই বদলে ফেলেছে। মরিচ চাষিরা জানিয়েছে, গত ৪/৫ বছর মরিচের দাম বাড়লেও ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। এবার একই সাথে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চাষিরা এবার কয়েক বছরের লোকসান এক মৌসুমেই পুষিয়ে নিচ্ছে।
জমি থেকে দু’দফা কাঁচা মরিচ তুলে বিক্রি করে শেষ পর্যায়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে। পুরো উপজেলা জুড়ে প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে লাল টুকটুকে মরিচ শোভা পাচ্ছে। জগৎপুরের মরিচ চাষি এলামুল ইসলাম, আব্দুল বারেক বাড়ির উঠানে মরিচ শুকাতে ব্যস্ত। মরিচের ঝালের ঝাঁজ ওদের কাবু করতে পারছে না। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে মরিচের ঝাঁজকে আমলেই আনছে না তারা। প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশে মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে হাসিমাখা মুখে কয়েকজন চাষি বাসসকে বলেন, মরিচ চাষে এবার খরচ বেশি হলেও বাজার মূল্যও ছিল বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১৪০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফলনও ভালো হয়েছে। এ এলাকায় বেলে-দোঁআশ মাটি হওয়ায় মরিচ চাষের জন্য বেশী উপযোগী। কৃষকেরা মনের আনন্দে শীতকালে জমিতে অন্য কোনো শস্য না বুনে মরিচের চাষ করে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে. উপজেলার জগৎপুর থেকে রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন বাড়িতে ও গ্রামের ক্ষেতে মরিচ শুকানো হচ্ছে। কোথাও-কোথাও দল বেঁধে মহিলারা মরিচ তুলছে। মাথাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, তিনি ৩৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেন। এ সময়ে পাকা মরিচ শুকিয়ে রাখেন। বর্ষা মৌসুমে দাম বেশি হলে বিক্রি করবেন। একই কথা বলেন, ওই গ্রামের আয়েত আলী।
কৃষকেরা জানায়, ৩০ শতক জমি চাষ করতে তাদের প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিতাস এলাকার চাষিরা এ মৌসুমে বিপদ না পড়লে মরিচ বিক্রি করে না। মরিচ শুকিয়ে ঘরে রাখলে কয়েক মাস পর আরো বেশি দাম পাওয়া যাবে। তাই কেউই পাকা মরিচ বিক্রি করতে চায় না। কড়িকান্দি বাজারের এক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, মরিচ চাষ করে এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহী করে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাহ উদ্দিন বলেন, স্বাদে অনন্য হওয়ায় তিতাসের মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। তাই নামি-দামী মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর এ মরিচের দিকে। যার জন্য চাহিদা অনেক দামও পেয়ে থাকেন ভাল। আমরা চাষিদেরকে লাভবান করে তুলতে মরিচ চাষের উপর প্রশিক্ষণ ছাড়াও মাঠে গিয়ে ফসলের সমস্যার উপর সার্বক্ষণিক কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ ও সার্বিকভাবে সহযোগীতা দিয়ে আসছি।
আকাশজমিন/আরজে