সুনামগঞ্জ সংবাদদাতাঃ
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরের কৃষক সন্তান সাহাব উদ্দিন। বয়োজ্যেষ্ঠ বাবাকে ঘরে রেখে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়া নিজেদের জমির ধান দেখাতে এসেছেন তিনি। জমির সব ধান রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে শুনলে কৃষক বাবা হার্ট অ্যাটাক করবেন বলে জানান তিনি। তাই এখনও বাবাকে জানতে দেননি শ্রম ঘামে ফলানো ধান এবার আর ঘরে তোলা হবে না। ধার দেনা করে এবার বোরো মৌসুমে ১৪ কেয়ার জমিতে ২৮ জাতের ধান রোপণ করেছিলেন সাহাব উদ্দিন। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ কেয়ারের সবটুকু জমির ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কীভাবে পুরো বছরের খাদ্যের যোগান হবে এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। সাহাব উদ্দিন বলেন, ধানে ফুল আসার পর দুধ হয়। দুধ থেকে ধান হয়। আমার সব ধান দুধ থাকতেই নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো ১৪ কেয়ার জমি নষ্ট হয়ে গেছে। জমির ধান রোপন করতে প্রত্যেক কেয়ারে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের সারা বছরের লালিত স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেল। ফসলের ওপর নির্ভর করে আমাদের পরিবারের জীবনযাপন। এতো বড় ক্ষতি সামলানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। কৃষি অফিস ২৮ চাষ করতে নিষেধ করেছে এমন কিছু আমাদের জানা নেই। তারা কোনোদিন আমাদের গ্রামে একটি উঠান বৈঠকও করেনি। শুধু সাহাব উদ্দিন নয়। জেলার তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, শাল্লাসহ বেশ কয়েক উপজেলার হাওরে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ। যারা ২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন তাদের ধান সংক্রমিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২৮ এর পাশাপাশি অন্যান্য জাতেও কিছুটা সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ছত্রাক জনিত এই ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধান। ধান পাকার আগেই সবুজ ধান গাছ জ্বলে সাদা হয়ে যাচ্ছে। আর কিছুদিন পরেই ফুল থেকে ধান হয়ে কৃষকের ঘরে উঠতো সোনালী ফসল। কিন্তু তার আগে ফুল থাকতেই নষ্ট হয়ে সাদা হয়ে গেছে কৃষকের সোনালী ধান। চিরচায়িত সবুজ হাওরে এখন মরা সাদা আভা ভেসে উঠছে। মানুষতো দূরে থাক, গরু ছাগলকেও নষ্ট হওয়া এসব ধান খাওয়ানো যাবে না বলে জানান চাষিরা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পুরো বছর কীভাবে চলবে সেই দুশ্চিন্তা এখন ভর করেছে তাদের।
ঢুপিকোনা গ্রামের কুমোদ বিশ্বাস বলেন, পর পর দুই বছর ধানে মাইর খেলাম। একটা ধানও এবার বাঁচাতে পারলাম না। শুধু আমার নয় সবারই কম বেশ ধান নষ্ট হয়েছে। কি রোগ এলো বুঝতে পারছি না। কৃষি বিভাগ থেকেও ঠিকমতো পরামর্শ পাই না। তাদের সাথে নিজ থেকে যোগাযোগ করে শুধু ওষুধের নাম পেয়েছি। কেনা লাগছে নিজের টাকায়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। সকল ধান মরে শেষ। বাচ্চা কাচ্চারে নিয়ে কীভাবে পুরো বছর কাটবে জানি না। বেতগঞ্জ গ্রামের সুবল সরকার বলেন, সবুজ ধান নষ্ট হয়ে সাদা হয়ে গেছে। ধানের বাইরে শুধু চিটা ভেতরে কিছুই নেই। এমন অবস্থা যে, মানুষ তো দূরে থাক গরু ছাগলও এই ধান খাবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় ব্রি-ধান ২৮ ও ২৯ এর তুলনায় ব্রি-ধান ৮৮,৮৯ ও ৯২ এর চাষাবাদ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও যারা ২৮ ধান রুপন করেছে তাদের কিছু কিছু জমিতে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমরা তাদের ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছি। যারা আমাদের পরামর্শ শুনেছেন তাদের জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ নেই। যে সমস্ত কৃষক ভাইয়েরা আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করেননি তাদের জমিতে কিছু আক্রমণ রয়ে গেছে যা অতি নগন্য এবং আমাদের ফসলের জন্য তেমন আশঙ্কা নেই। ব্লাস্টের কারণে জেলায় মাত্র ৭ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলেও জানান তিনি।
আকাশজমিন/ আরজে