আকাশজমিন ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন সাড়ে ১৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের উৎপাত-অপরাধও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যৎ ও অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলছেন, মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গারা এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার সরকারের জন্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ঝুলে রয়েছে। প্রতিনিয়তই স্থানীয়দের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভয় তাড়া করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে উঠে এসেছে, কক্সবাজার জেলার মোট জনসংখ্যা ২৮ লাখ ২৩ হাজার ২৬৫ জন। আর শুধু উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতেই সাড়ে ১৪ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৯০ থেকে ১০০টি শিশু। বিপুল এই জনস্রোতের পরিষেবা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। ক্রমাগত অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের কারণে নিজেদের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তারা বলছেন, বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা এমন আচরণ করছে, যেন তারাই এখানকার প্রকৃত অধিবাসী। উখিয়া ও টেকনাফে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্রোতের মতো আসা রোহিঙ্গাদের চাপে কৃষিজমি, শ্রমবাজার ও শিক্ষাসহ এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের নানা দিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশও ধ্বংস হচ্ছে। সার্বিকভাবে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের বসতির কারণে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন উখিয়া ও টেকনাফে ১২ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য দুই লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি গোসলখানা, ত্রাণ সংরক্ষণের জন্য ২০টি অস্থায়ী গুদাম, ১৩ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন, ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং ২০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এজন্য দুই হাজার ২৩১ কোটি টাকার বন ধ্বংস হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার পরিবেশ, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে ৩২টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। এসব গ্রুপের অপতৎপরতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র জঙ্গি রয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক। তাদের নিরস্ত্র সমর্থক রয়েছে দুই লক্ষাধিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ এক রোহিঙ্গা নেতাই এমন তথ্য দিয়েছেন। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক পাচার, চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত।
অপরাধের আখড়ায় পরিণত হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ড্রোন ক্যামেরা ও ওয়াচটাওয়ার বসিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে এর মধ্যেই গত সাড়ে পাঁচ বছরে ক্যাম্পে ১৪৭টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধের কারণে মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬২৯টি।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তবে ২২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাড়ে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ কারণে জনভোগান্তি এখন অন্তহীন। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে বিভিন্ন সেবা ও শিক্ষাগ্রহণ থেকে স্থানীয়দের বঞ্চিত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
আকাশজমিন /এসআর