রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
মাদারীপুরে পদ্মা নদীতে অভিযান

পাড়েই বসেছে অস্থায়ী ইলিশের বাজার

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ৫:৫৮ pm

মাদারীপুর প্রতিনিধি:

সরকারিভাবে ২২দিন ইলিশ শিকার, সংরক্ষণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকলেও জেলার শিবচরে পদ্মা নদী ও পাড়ের চিত্রটা অন্য রকম। মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা নদীতে চলছে যৌথ অভিযান। আর পাড়েই বসেছে খোলা চরে অস্থায়ী ইলিশের বাজার। রীতিমত তরতাজা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে নির্বিঘ্নে। সাধারণ ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নিষিদ্ধ মৌসুমে গড়ে উঠা অস্থায়ী ইলিশের বাজারে। পদ্মা নদীর বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ে এভাবেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। পদ্মা নদীর ৪/৫টি স্থানে প্রতিদিন ভোরে, বিকেলে ও সন্ধা রাতে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। এ খবরে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ কিছুটা সস্তায় তাজা ইলিশ কিনতে ছুটে আসেন পদ্মা পাড়ে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিন ইলিশ শিকার, সংরক্ষণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। তাই মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা নদীতে শিবচর উপজেলা মৎস্য অফিস, প্রশাসন, নৌপুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। সময় ভাগ করে একাধিক টিম পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করছেন। জেলে আটকসহ জব্দ করা হচ্ছে লাখ লাখ মিটার কারেন্ট জাল। গত ১০-১২দিন অভিযান চালিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিস ও নৌপুলিশ ৫ লক্ষাধিক মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করেছে। এছাড়াও ট্রলার জব্দ, জেলে আটক, জরিমানা এবং মা উদ্ধারও করেছে। অভিযান চলমান থাকার পরও পদ্মাপাড়ে বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও বসেছে অস্থায়ী ইলিশের বাজার। এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু জেলে মাছ ধরে এনে নদীর পাড়ে বিক্রি করছেন। মাছ বিক্রির খবর পেয়ে নারী-পুরুষ ছুটছেন পদ্মার পাড়ে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিবচরের বন্দরখোলা ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের কাজিরসূরা এলাকা। একের পর এক ট্রলার এসে ভিড়ছে। ট্রলারে বসেই তাজা ইলিশ বিক্রি করছেন জেলেরা। নদীর পাড়ে মাছ নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসেছে বাজার। দরদাম করে মাছ কিনছেন সাধারণ মানুষ। আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি থেকে শুরু মাছের দাম। বড় মাছ বেশির ভাগই ডিমে পূূর্ণ। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ আসছেন মাছ কিনতে। দাম কম হওয়ায় বেশি পরিমান মাছ কিনছেন একেকজন। ১ কেজি পরিমান মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ শত টাকা কেজি দরে।

স্থানীয়রা বলেন, ‘রাতে যে মাছ শিকার করা হয় তা ক্রয় করতে ভোর থেকেই মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে। সকাল ৮/৯ টার মধ্যে সকালের বাজার ভেঙে যায়। এরপর দিনে যে মাছ ধরা হয় তা নিয়ে আছরের পর বেচা-কেনা শুরু হয়। চলে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত। এছাড়াও পদ্মানদীর বিভিন্ন চরের দুর্গম কাঁশবনে রাতেও মাছ পাওয়া যায়।’

ভাঙ্গা থেকে মাছ কিনতে আসা মো. রিপন নামে এক যুবক বলেন, ‘নদীর পাড়ে এখন একদম তাজা ইলিশ পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশের অনেকেই মাছ কিনে আনছে। এজন্য কিনতে এসেছি। দাম বাজার তুলনায় খুব একটা কম নয়।’ মাছ বিক্রি করেন এমন একাধিক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাছ না ধরলে খাবো কী? তাছাড়া আমরা বন্ধ রাখলেও তো সবাই বন্ধ রাখে না। মাছ ঠিকই ধরে। এই সময়ে নতুন জেলেদের আগমন ঘটে। তারা মাছ ধরবেই। আমরা কেন বসে থাকবো? পদ্মা বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ধরা হয়। বিশেষ করে মধ্যরাতে ফেলা জালে মাছ বেশি ধরা পড়ে।’

কাজিরসূরা এলাকা ছাড়াও বাংলাবাজার-চরজানাজাত সীমান্ত এলাকাসহ পদ্মানদীর চর এলাকার ৪-৫ টি স্থানে ইলিশের বাজার বসে। জেলে নৌকা ঘাটে ভিড়তে না ভিড়তেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা। ব্যাগ ভর্তি করে মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরেন তারা।

এলাকাবাসী বলেন, ‘চরে আসা-যাওয়ার পথে পুলিশের চেকপোষ্ট বসালে ক্রেতারা মাছ কিনতে যেতে পারতো না। শিবচরের মূল ভূ-খন্ড থেকে চর এলাকায় যেতে নির্দিষ্ট দুই-একটি পথ আছে। মাছ বিক্রির বাজারে অভিযানসহ প্রবেশ পথেও নজরদারি থাকলে মাছ বিক্রি কমে যাবে। এতে ধরাও কিছুটা কমবে।’ মো. সারোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘নদীতে অভিযান চললেও পদ্মার চর এলাকায় গড়ে উঠা এসব হাটে দ্রুত অভিযান চালানো উচিত। হাটগুলো বন্ধ করা উচিত। চর এলাকা কিছুটা দূর্গম হলেও সাধারণ ক্রেতারা পায়ে দীর্ঘপথ হেঁটে নদীর পাড়ে গিয়ে মাছ কিনছে। জেলেরাও প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন।’

শিবচর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস ইবনে রহিম বলেন, ‘আমরা তো নদীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করি; পদ্মা পাড়ে বসা হাটের স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের যৌথ অভিযান চলমান আছে। আজো (বৃহস্পতিবার) বৃষ্টির মধ্যে এসি ল্যান্ড স্যার সেনাবাহিনী ও নৌপুলিশ নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছেন। মূলত ওগুলো হাট নয়, খোলা জায়গায় বিক্রি করে।’

আকাশজমিন/আরআর

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD