রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

বহু রোগের কারণ প্লাস্টিক

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ১:৫৭ am

আকাশজমিন প্রতিবেদক: প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যঝুঁকিবিষয়ক প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উৎপাদন থেকে শুরু করে তা ভাগাড় বা সাগরে ফেলে দেয়া পর্যন্ত ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, জন্মগত ত্রুটিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

বস্টন কলেজের গ্লোবাল অবজারভেটরি অন প্ল্যানেটারি হেলথ, অস্ট্রেলিয়ার মিন্ডেরু ফাউন্ডেশন এবং সেন্টার সায়েন্টিফিক ডি মোনাকোর সহযোগিতায় এক যৌথ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্লাস্টিক উৎপাদন, ব্যবহার ও নিষ্কাশনের প্রচলিত পদ্ধতিগুলো টেকসই নয় এবং মানুষের স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতির জন্য দায়ী। এ ছাড়া প্লাস্টিক প্রকৃতির ওপরও অবিচার করছে।

চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী অ্যানালস অব গ্লোবাল হেলথে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান এ ক্ষতির প্রধান চালক হলো বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি। এতে ক্ষতির পরিমাণ কেবল দীর্ঘই হচ্ছে। কেননা প্লাস্টিক খুব বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যরে প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।

প্লাস্টিক উৎপাদন কর্মীসহ যেসব কয়লাখনি, তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের শ্রমিক প্লাস্টিক উৎপাদনের কাঁচামাল জীবাশ্ম কার্বন সংগ্রহ করেন তারা সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। প্রতিবেদনে বলা হয় : সিলিকোসিস, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের রোগ, ফুসফুস ক্যান্সারের মতো মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন প্লাস্টিকের কাঁচামাল সংগ্রহকারী শ্রমিকরা। প্লাস্টিক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মস্তিষ্ক ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, মেসোথেলিয়মার ঝুঁকিতে থাকে। প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা হৃদরোগ, বিষক্রিয়া, স্নায়ুরোগ ও ফুসফুস ক্যান্সারে অধিক হারে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া প্লাস্টিক উৎপাদন ও বর্জ্য নিষ্কাশন স্থানের পাশের বাসিন্দারা অপরিণত ও কম ওজনের শিশু জন্মদানের সমস্যায় ভোগেন। এসব বাচ্চা হাঁপানি, লিউকেমিয়া, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে।

পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের প্রভাব কমাতে ওই প্রতিবেদনে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক চুক্তির সুপারিশ করা হয়। লেখকরা বলেন, যেকোনো চুক্তিই ২০২২ সালের মার্চে জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদে নির্ধারিত নির্দেশপত্র অনুসারে হওয়া উচিত।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক সিবাচার এ রকম বাধ্যতামূলক চুক্তির প্রয়োজন আছে বলে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে এবং প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবাশ্ম জ্বালানি সমানুপাতিক হারে জলবায়ু পরিবর্তনকে চালিত করে। তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবস্থাপনার আবশ্যক বিষয়গুলো বারবারই বিভিন্ন প্রকাশনায় উঠে এসেছে, বিশেষত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহারই অপ্রয়োজনীয় বা একবার ব্যবহারযোগ্য। এ নতুন প্রবন্ধটি অন্যসব প্রকাশনাকে একত্র করে একটি কংক্রিট নির্দেশনা দিয়েছে।

ব্রিসবেনের কিউআইএমআর বার্গহফারের অধ্যাপক অ্যানড্রিয়াম সুহরবিয়ারের মতে, অধিকাংশ মানুষের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ প্লাস্টিক রয়েছে। এর প্রভাব অনুসন্ধান করার জন্য আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সপ্তাহে একজন মানুষের শরীরে একটি ক্রেডিট কার্ডের ওজনের সমপরিমাণ প্লাস্টিক প্রবেশ করে, মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে।

এ ধরনের প্লাস্টিক মানবস্বাস্থ্যে কী কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে? কোন ধরনের রোগ অধিক হয়? আমাদের জনসংখ্যার মধ্যে কারা এ প্রভাবে সবচেয়ে বিপদাপন্ন? দুঃখের বিষয় হলো এ নিয়ে ভালো চিকিৎসা গবেষণার পরিমাণ খুবই কম।

মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুবই কঠিন যখন গবেষণার জন্য সুগঠিত ও নিবেদিত অনুদান অনুপস্থিত।

কার্বন দূষণের সঙ্গে সারা পৃথিবীতে ভয়াবহ মাত্রায় প্লাস্টিক দূষণ ঘটছে। পরিবেশে মিশে যাওয়া প্লাস্টিক ক্ষয়ে যেতে থাকে এবং তৈরি হয় ন্যানোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রতম কণা। প্রাণীর ওপর এ ন্যানোপ্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় জীববিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ভ্রূণে ন্যানোপ্লাস্টিক ঢুকলে তা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে। মুরগির ভ্রূণে ন্যানোপ্লাস্টিক প্রবেশ করিয়ে বিজ্ঞানীরা এ পরীক্ষা চালান।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ন্যানোপ্লাস্টিক স্টেমসেলগুলোকে প্রভাবিত করে। এ স্টেমসেলগুলো থেকে টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত এ নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : মুরগির ভ্রূণের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়কে ব্যাহত করে ন্যানোপ্লাস্টিক।

আকাশজমিন/এসআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD