আকাশজমিন প্রতিবেদক: ঢাকায় পানির উৎস দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শহরে কমপক্ষে ১৫ ভাগ প্রাকৃতিক জলাধার থাকা দরকার কিন্তু বাস্তবে তা চার-পাঁচ ভাগেরও কম। মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় ঢাকায় পানি সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর জন্য পানির কোনো উৎস পাচ্ছিলেন না। তারা তাদের রিজার্ভ থেকে পাঁচ হাজার লিটার পানি নিয়ে প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু ওই পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা সংকটে পড়েন। মার্কেটটিতে আন্ডারগ্রাউন্ডে পানির কোনো রিজার্ভার ছিল না। রাস্তার পাশেও নেই কোনো ফায়ার হাইড্রেন্ট। আশপাশে কোনো উন্মুক্ত জলাধারও নেই। পাশের ওসমানি উদ্যানের পুকুরটিতেও পানি নেই। সব মিলিয়ে চরম এক সংকটে পড়েন তারা।
শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের পুকুর থেকে দীর্ঘ পানির পাইপ লাইন টেনে পানি আনে ফায়ার সার্ভিস। আর হেলিকপ্টারে করে পানি আনা হয় হাতিরঝিল থেকে। এর আগে বসুন্ধরা সিটিতে আগুনের সময়ও হাতিরঝিল থেকে পানি আনতে হয়েছিল।
ঢাকা ওয়াসা এখন ভূগর্ভস্থ পানিই বেশি কাজে লাগাচ্ছে। গত ২৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সংসদে জানিয়েছেন, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর দুই থেকে তিন মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে বলে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের এক সমীক্ষয় দেখা গেছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এলাকাভেদে ৩৮ মিটার থেকে ৮২ মিটার নিচে। আর ঢাকা ওয়াসা শহরে ৬৬ শতাংশ ভূগর্ভস্থ এবং ৩৪ শতাংশ ভূউপরিস্থ পানি সরবরাহ করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর নির্ভরতা ৩০ ভাগে নামিয়ে আনতে না পারলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। ভূ-উপরিস্থ পানি হতে হবে ৭০ ভাগ।
খাল গেল কোথায়? ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় খালের সংখ্যা ৪৭। তবে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৫৬টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও তার সবই মৃতপ্রায়। এর মধ্যে দখল হয়ে যাওয়া ২৬টি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা দিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। বাকি খালগুলোর অস্তিত্ব তারা এখনো খুঁজে পায়নি। জানা গেছে, খাল দখলদারদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও দখল করেছে।
ঢাকা শহরের যে খালগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল আর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা মিলিয়ে মোট ৭৭টি খালের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেছে।
হাজার পুকুরের শহরে পুকুর নেই। ঢাকা শহরে পুকুরের সংখ্যা ছিল দুই হাজারেরও বেশি। মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল দুই হাজার। কিন্তু ঢাকায় এখন পুকুরের সংখ্যা একশ’র কম। জানা গেছে, যে এক হাজার ৯শ’ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার ভরাট হয়ে গেছে তাতে জমির পরিমাণ ৭০ হাজার হেক্টর। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্না ল হারিয়ে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নিম্নভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে।
আকাশজমিন/এসআর