বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

মাখন-নিজাম থেকে যেভাবে হয়ে ওঠেন মাসুদ আলী খান

আকাশজমিন রিপোর্ট:
  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪ ১:৪১ pm

বিনোদন ডেস্ক:

ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিন আমলেই অভিনয় করা মানুষ মাসুদ আলী খান। মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই বিচিত্র সব চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছেন সবার চেনা। সেই শক্তিমান অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন। আজ ৪ টা ২০ মিনেটে রাজধানীর গ্রীণরোডের নিজ বাসাতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

মাসুদ আলী খানের জন্ম ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে। বাবা আরশাদ আলী খান ছিলেন সরকারি চাকুরে। থাকতেন কলকাতায়। মা সিতারা খাতুন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মাসুদ তৃতীয়। মা তাকে আদর করে ডাকতেন ‘মাখন’ আর বাবা ‘নিজাম’।

স্কুলের বার্ষিক নাটকগুলোতে তিনি ছিলেন অপরিহার্য অভিনেতা। আর কুমিল্লা বড় বোনের বাসায় থাকার সময় ভার্নাল থিয়েটারের সাহজাহান নাটকেও অভিনয় করেছিলেন। এরপর ঢাকার জীবন শুরু।

ঢাকায় আজিমপুরে বড় ভাই মাহবুব আলী খানের মেসে উঠেছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এ সময় ডাক ও টেলিফোন বিভাগে কাজও জুটিয়ে ফেললেন। এক বছর বাদে ১৯৫২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। দুই বছর পর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ। সেই সময় যুক্ত হন শহীদ সাবের, বদরুল হাসান, ফওজুল করিম, মেসবাহ-উল হক, মন্টু খানদের গড়ে তোলা সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অগ্রণী শিল্পী সংঘ’-এর সঙ্গে।

১৯৫৬ সালে মাকসুদুস সালেহীন ও বজলুল করিম গড়ে তোলেন ড্রামা সার্কেল। দলটিকে বলা হয় ঢাকার প্রথম আধুনিক নাট্যদল। প্রায় শুরু থেকেই দলটির সঙ্গে ছিলেন মাসুদ আলী খান। ড্রামা সার্কেলের হয়ে ‘রক্তকরবী’, ‘বহিপীর’, ‘রাজা ও রাণী’, ‘ইডিপাস’, ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’, ‘দৃষ্টি’সহ বহু নাটকে অভিনয় করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে দলটি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত এখানে তার সক্রিয় উপস্থিতি ছিল।

অভিনয়ের পাশাপাশি কখনো কখনো নাট্যপরিচালনাও করেছেন তিনি। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি মঞ্চে তাঁর পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তাসের দেশ।

১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন স্থাপিত হওয়ার পর পর নূরুল মোমেনের নাটক ভাই ভাই সবাই দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক। আর সাদেক খানের নদী ও নারী দিয়ে বড় পর্দায় হাতেখড়ি। এই চলচ্চিত্রে নায়ক আসগর চরিত্রে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন। এরপর পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে একের পর এক বৈচিত্র্যময় নানা চরিত্র করে চেনামুখ হয়ে ওঠেন মাসুদ আলী খান।

 

মাসুদ আলী খান ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন তাহমিনা খানকে। এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মাহমুদ আলী খান যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী। আর মেয়ে নাজমা খান ধানমন্ডির বাসিন্দা।

চাকরিজীবনে সরকারের নানা দপ্তরে কাজ করেছেন মাসুদ আলী খান। ১৯৬২ সালে শুরু করেন পর্যটন করপোরেশনের চাকরি। আর ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন আরও এক যুগ। এর পর থেকে অভিনয়ই তাঁর ‘পেশা’।

তার অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘দুই দুয়ারি’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘মাটির ময়না’। তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’। ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এই শোব দিন রাত্রি’।

উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে ‘সুখী মানুষ প্রকল্প’, ‘দিন চোলে যায়’, ‘মধুর ঝমেলা’, ‘গুলশান এভিনিউ’, ‘শাদা কালো সোম’, ‘শাপমোচন’, ‘পঞ্চাশ-পঞ্চাশ’, ‘পৌষ ফাগুনের পালা’, ‘প্যাভিলিয়ন’।

আকাশজমিন/আরআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
আর্কাইভ
© All rights reserved © Akashjomin

Developer Design Host BD