আকাশজমিন ডেস্কঃ
পাকিস্তানিদের জন্য এক কঠিন সময় এসেছে এবারের রমজানে। খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে চলায় দরিদ্রদের জন্য খরচ সামলানো দিন দিন আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। পাকিস্তানে ইতিহাসে এর আগে কখনও এই পর্যায়ে যায়নি মূল্যস্ফীতি। শিগগিরই এই মূল্যস্ফীতি হ্রাসের কোনো সম্ভাবনা নেই; উপরন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি পৌঁছাতে পারে ৩৩ শতাংশে। চলতি বছরের রমজানকে দেশটির অর্থনীতিবিদদের অনেকেই ‘প্রাণঘাতী এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল’ বলে চিহ্নিত করেছেন। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের ওপর এই লাগামহীন মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। পাকিস্তানে রমজানকে ‘দানের মাস’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এই মাসে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম সচ্ছল মানুষদের ভিক্ষা, কাপড় এবং খাবার দান করেন।
কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকার বিনামূল্যে গম বিতরণের মতো দাতব্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের কর্মসূচিতে ভালোর চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। বিতরণে অব্যবস্থাপনার কারণে ময়দা বিতরণ কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়ে পদদলিত হয়ে চলতি রমজান মাসে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।
সিন্ধ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক সাবেক সমন্বয়কারী হারিস গাজদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘দানের পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে চাহিদার ওপর চাপ তৈরি হয়, ফলে দামের ওপরও প্রভাব পড়ে। সবচেয়ে দরিদ্রদের দান করলেও তা আসলে তেমন কাজে আসে না, বরং যারা আসলে ভিক্ষা পান না বা গ্রহণ করেন না, তাদের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।’
বেড়ে চলা দারিদ্র্য
রমজানের আগেও পাকিস্তানে প্রতি ১০ কিলোগ্রাম ময়দার বাজার মূল্য ছিল ৬৮০ পাকিস্তানি রুপি। রমজান মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২০ পাকিস্তানি রুপিতে। চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বেড়েছে। পাশাপাশি গম বিক্রেতারা বিনামূল্যে গম প্রকল্পের কারণে হওয়া ক্ষতিও পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করায় দাম আরো বেড়েছে। অনেক শ্রমজীবী মানুষকেই হয় আটার জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, অথবা সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে উচ্চ দামে আটা কিনতে হচ্ছে।
অন্য নানা এলাকার তুলনায় রাজধানী ইসলামাবাদে পরিচালিত বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে ভালো। এসব কেন্দ্রে এখনও কোনো গুরুতর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। ইসলামাবাদ জুড়ে উনিশটি বিতরণ কেন্দ্র রয়েছে। সেসব কেন্দ্র থেকে এরই মধ্যে অন্তত চার লাখ ১০ কেজি গম বিতরণও করা হয়েছে। পাকিস্তানের সরকারি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল ডাটাবেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটির অধীনে প্রতিটি পরিবারকে একটি ১০ কেজি আটার বস্তা দেয়া হচ্ছে। নিহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গড়ে তোলা বেনজির ফেডারেশনের কর্মসূচির অধীনে অতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে দেওয়া হচ্ছে ১০ কেজি আটার তিনটি করে প্যাকেট৷
ভোটের জন্য গম?
রমজান মাসে দানের আলাদা মহিমা রয়েছে। কিন্তু অনেকেই সরকারের সত্যিকার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান। পাকিস্তানের সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ উমর খালিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আইএমএফের প্রকল্প নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে খুব শিগগিরই যেহেতু অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, ভোটারদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সমাজের নীচের স্তরে অবস্থিত মানুষের জন্য এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’
ভোট টানার জন্য এই ধরনের প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। কিন্তু দেশটির প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দিন দিন নির্বাচনের প্রতি উদাসীন হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রমজানের সময় দেশের দরিদ্রদের উন্নতি করতে চাইলে মহামারিকালীন নগদ তহবিল দেয়ার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সরকারের।
আটলান্টিক কাউন্সিলের পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক উজাইর ইউনাস এই স্কিমগুলোকে সরকারের ‘লোকদেখানো কর্মসূচি’ বলে মনে করেন।
আকাশজমিন/আরজে