প্রফেসর এম এ রউফ
প্রথম মহাযুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্র হাংগেরী সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার আর্চ ডিউক ফ্রান্স ফারদিনান্দ এর হত্যাকান্ড। অস্ট্র হাঙ্গেরির এক নাগরিক এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। জাতিতে তিনি ছিলেন বসনিয় সার্ব। বসনিয়া তখন এই সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
১৯৩৯ সালের এক সেপ্টেম্বর জার্মানির হিটলার পোল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে সেনা প্রবেশের মাধ্যমে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সূচনা করে। ৩ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। জার্মানিকে প্রথম মহাযুদ্ধের কারণ হিসেবে মিত্রশক্তি দায়ী করে। অসম ভার্সাই চুক্তির জন্য কেবল জার্মানিই নয়, সমগ্র ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। জার্মান ভার্সাই চুক্তি বাতিল ঘোষনা করে, অধিকতর বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যা ১৯৩৯ সালে শুরু এবং ১৯৪৫ সালে সমাপ্ত।
এই যুদ্ধে মিত্রশক্তি আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স ইত্যাদি এবং জার্মান, ইতালি, অটোম্যান ও জাপান অক্ষ শক্তির নেতৃত্ব দেয়। যুদ্ধে অক্ষশক্তি হেরে যায় এবং মিত্রশক্তি জয়লাভ করে। এই যুদ্ধে সর্বমোট ৫ কোটি থেকে ৮.৫ কোটি লোক নিহত হয়েছে ।
১৯৫৪ সালে ভিয়েতনাম ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অধিকাংশ জনগণ চেয়েছিল ভিয়েতনাম হবে, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ইহা হোচিমিন কর্তৃক কমিউনিস্টদের দ্বারা শাসিত হবে। উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট হয় দুটো ভাগ। ১৯৫৪ সালের ২১ জুলাই সর্বোদলীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, উভয় ভিয়েতনাম একীভ‚ত থাকবে ।
হো চি মিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকার দেশটি শাসন করবে। কিন্তু দক্ষিণ ভিয়েতনাম নেতা নরোদম সিহানুক ইহা অস্বীকার করেন। আমেরিকা তাকে সমর্থন যোগায়। স্বল্প সময়ের মধ্যে উভয় অংশের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। হো চি মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম এক রাষ্ট্র গঠন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই যুদ্ধে বেশি বোমা বর্ষণ করা হয়েছে।
সোভিয়েত, রাশিয়া, ও আফগানিস্থানের প্রথম যুদ্ধ ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্্রুয়ারি। এই যুদ্ধে ৬ থেকে ২০ লক্ষ আফগানি নিহত হন। মূল কারণ ছিল কমিউনিস্ট ও তালেবান দ্ব›দ্ব। তালেবান রোধে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্থান দখল করে। ১৯৮৯ সালে রাশিয়া আফগানিস্থান ত্যাগ করে।
২০০১ সাল থেকে আমেরিকা ও আফগানিস্থানের যুদ্ধ। ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য তালেবানদের দায়ী করে, যুদ্ধের কারণ হিসেবে আমেরিকা ব্যাখ্যা দেয়। ২০২১ সালে তালেবান বিজয়ী হয়। মার্কিনরা আফগান ছেড়ে চলে যায়।
ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা সমূহে দেখা যায়, কারণ ছাড়া কিছুই ঘটেনি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বলছে বাংলাদেশিরা কেন ভারতবিদ্বেষী? উত্তরে কি বলা যায় না, কেন ভারত বাংলাদেশ বিদ্বেষী? আমাদের দেশে, ভারতের আগ্রাসন। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুজব ছড়ানো, সাবেক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে, ভারত বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত, দেশে কাল্পনিক মিথ্যা দাঙ্গা প্রচার করে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, কাটাতারের বেড়া, অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ, বাংলাদেশে বহু রাস্ট্র বিরোধী সংগঠন গড়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে, নানা সংকট তৈরি করে এবং সীমান্ত বিরোধ সৃষ্টি করে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কে দায়ী?
প্রতিবেশী দেশ থেকে কি এর জবাব পাব? মনে রাখতে হবে আমরা, এমন কিছু যাতে না করি, যার জন্য প্রকৃতির শাস্তি অনিবার্য হয়ে ওঠে। হিটলার জার্মানিতে ইহুদী নিধন করে, ফলে অবশিষ্টরা ফিলিস্তিনে রাস্ট্রে চলে আসে। ফিলিস্তিনে ইসরাইল স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হলো, ফিলিস্তিনিদের নিকট থেকে ভ‚মি কেড়ে নিয়ে। কিন্তু শান্তি কোথায়? আজ ইসরাইল ফিলিস্তিনদের হত্যা করছে। এর জন্য প্রকৃতির নিয়মে চরম মূল্য দিতে হবে। ইসরাইল এবং তার সহযোগীরা জানে, সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে ক্ষতি ১৫০ বছরের ইতিহাসকে ছাড়িয়ে গেছে। সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশ এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ। অসহায় ক্যালিফোর্নিয়াবাসী কেবলই অপেক্ষা করছেন, আল¬াহর রহমতের উপর। আল¬াহ তাদের প্রতি রহমত করুন। রহমত করুন মনুষ্য সৃষ্ট অত্যাচার গাঁজাবাসীদের ওপর।
- উপদেষ্টা, কসমস হলিডে