ঢাকা, বাংলাদেশ ।
  বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,  ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঘার চরাঞ্চলে বরইচাষে বিপ্লব, বাম্পার ফলন


উপজেলার চরাঞ্চলে নানা জাতের বরইয়ের বাম্পার ফলন । ছবি: আকাশ জমিন

  • আপলোড সময় : শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ সময় : ১০:১৭ এএম

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলে নানা জাতের বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। পদ্মার চরের পতিত জমিতে শিক্ষিত যুবকদের বরইচাষে আত্মনিয়োগে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে লোভনীয় নানা জাতের বরই চাষে বিপ্লব ঘটেছে উপজেলার চরাঞ্চল। 

কাঁচা হোক কিংবা পাকা, বরই পছন্দ করেন না এমন মানুষ মেলা ভার। বরই এমন একটি ফল যা কাঁচা- পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। রয়েছে অনেক পুষ্টিগুনও। দেশের প্রায় সব জেলাতেই বরই চাষ হচ্ছে এখন বাণিজ্যিকভাবে। তবে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে বরইয়ের উৎপাদন অনেক বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ অঞ্চলের বরই বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাই কয়েক বছরে বাঘার চরে বেড়েছে বরই চাষ।

খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গেস কথা বলে জানা গেছে, পদ্মার বুকে জেগে উঠা চরের মধ্যে রয়েছে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন। পদ্মার এই চর একসময় থাকতো অনাবাদি। স্থানীয়ভাবে মৌসুমভেদে কিছু পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ, ধান, হলুদ, আদাসহ কয়েক রকমের শাকসবজির চাষ হতো। তবে এখন বিস্তীর্ণ এ চরে রবিশষ্যসহ ফলছে নানা জাতের বরই। এবার ‘বল বরই’ নামের একটি বিশেষ প্রজাতির বরইয়ের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, রবই চাষে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম খরচে বেশী লাভের আশায় চকরাজাপুর ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি চরে বল সুন্দরী, আপেল, বাউ ও থাই জাতের বরই চাষের নতুন বিপ্লব ঘটেছে। বরই চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় বালুযুক্ত পদ্মার চরে অন্য ফসল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বর্তমানে পদ্মার চরে বরই চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন অনেকে। কলিগ্রামের বিদ্যুৎ আহম্মেদ, শফিকুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দীন, সোনা মিঞা, ইউসুফ আলী, আশরাফুদৌলার মতো অনেকে এখন স্বাবলম্বী বরই চাষ করে। 

গাছন থেকে বরই উঠা শুরু হয়েছে বেশকিছুদিন আগে থেকেই। তবে এখনো প্রতিটি গাছ ফলে টইটম্বুর। ফলের ভারে মাটিতে নুঁয়ে পড়েছে ডাল। পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধু বরই আর বরই। চাষিরা কেউ বাজারজাত করার জন্য গাছ থেকে নামাচ্ছেন, আবার কেউ পরিচর্যা করছেন।

বরই চাষি বিদ্যুৎ আহম্মেদ বলেন, পদ্মার চরে তিনি ৭ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী বরই চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন আশা করছেন তিনি ১৩০-১৫০ মণ। ৭ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন তিনি।

তিনি জানান, বল সুন্দরী বরই বাজারে প্রতিমণ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে দুই মণ বরই ৭৫ টাকা প্রতিকেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া বাউ ও থাই কুল বরই এর বাজারও ভালো আছে। দামও ভালো আশা করছেন তিনি। 

মুলত: আম চাষের জন্য খ্যাতি রয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও চাষাবাদ হয়। আর চরের জমিতে সব ধরনের ফল-ফলাদির পাশাপাশি বরই এখন অন্যতম লাভজনক ফসলে পরিনত হয়েছে। 

চরাঞ্চলের বরই চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, চরে এখন উন্নত জাতের আপেল কুল, বাউকুল, তাইওয়ান ও থাইকুলের চাষ হচ্ছে ব্যপক ভাবে। এর মধ্যে আপেল কুল জনসাধারণের কাছে বেশি সমাদৃত। তিনি বলেন, এ বছর ৪০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের বরই এখন এ অঞ্চলের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়ন পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাঘার মাটি সব ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। আর চরের মাটি আরো উর্বর। বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদন হয় পদ্মার চরাঞ্চলে। এখন এলাকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। কৃষকদের আগ্রহ বলবৎ থাকলে এ উপজেলায় প্রধান অর্থকারী ফসল আমের পরেই হতে পারে বেরইয়ের স্থান। যা বিদেশে রফতানী করে অর্থনৈতিক ভাবে কৃষকদের ভাগ্য বদলে সহায়ত করতে পারে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়েছে। এরমধ্যে পদ্মার চরে চাষ হয়েছে ৭০ ভাগ। বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি আর্থিকভাবে বরই চাষে বেশী আগ্রহী হচ্ছে চাষিরা। কৃষি বিভাগের মতে, এখানকার মাটি দো-আঁশ। যা বরই চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী।


এ সম্পর্কিত আরো খবর